স্টিভ আরউইন এর জীবনী | Biography Of Steve Irwin
স্টিভ আরউইন এর জীবনী | Biography Of Steve Irwin

জন্ম
|
২২ ফেব্রুয়ারী, ১৯৬২, এসেনডন, ভিক্টোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া |
ক্যারিয়ার
|
আরউইন দায়িত্ব নেবার আগ পর্যন্ত পার্কটি একটি পারিবারিক বাণিজ্য ছিল। তিনি পার্কটি চালানোর ভার গ্রহণ করেন যাকে বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া জু বলা হয়। ১৯৯২ সালে তিনি সরীসৃপ এবং ওয়াইল্ড লাইফ বিষয়ক এক পর্বের টিভি অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করেন। |
মৃত্যু
|
৪ সেপ্টেম্বর ২০০৬ (বয়স ৪৪) বাট রিফ, কুইন্সল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া |
জন্ম:
২২ ফেব্রুয়ারী, ১৯৬২, এসেনডন, ভিক্টোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া
স্টিভ আরউইন (জন্ম ২২শে ফেব্রুয়ারী, ১৯৬২, এসেন্ডন, ভিক্টোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া—মৃত্যু ৪ই সেপ্টেম্বর, ২০০৬, কুইন্সল্যান্ডের পোর্ট ডগলাস উপকূলে) ছিলেন একজন অস্ট্রেলিয়ান বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবাদী, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব এবং শিক্ষাবিদ যিনি দ্য ক্রোকোডাইল হান্টার (১৯৯২-২০০৬) টেলিভিশন সিরিজ এবং সম্পর্কিত তথ্যচিত্রের উচ্ছ্বসিত উপস্থাপক হিসেবে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
উন্মত্ত শক্তি এবং আকর্ষণীয় বালকসুলভ উৎসাহের সাথে, আরউইন তার দর্শকদের অস্ট্রেলিয়ার আউটব্যাক এবং পরে এশিয়া ও আফ্রিকার জঙ্গলে মারাত্মক এবং সাধারণত বিপন্ন প্রাণী, বিশেষ করে কুমিরের সাথে বেপরোয়াভাবে ঘনিষ্ঠভাবে মুখোমুখি হতে পরিচালিত করেছিলেন ।
যদিও কখনও কখনও বন্যপ্রাণীদের অপ্রয়োজনীয়ভাবে বিরক্ত করার জন্য বা শোম্যানশিপে লিপ্ত হওয়ার জন্য সমালোচিত হন, আরউইন দাবি করেছিলেন যে তার ঝুঁকি নেওয়ার ধরণ হুমকির সম্মুখীন কিন্তু বিপজ্জনক প্রাণীদের প্রতি উদ্বেগ জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করেছে এবং দর্শকদের সরাসরি তাদের শক্তি, সৌন্দর্য এবং স্বতন্ত্রতা উপলব্ধি করতে সক্ষম করেছে।
আরউইন বন্যপ্রাণীর প্রতি তার আগ্রহের উৎস ছিলেন তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে, যারা অস্ট্রেলিয়ার বন্য সরীসৃপদের রক্ষার প্রাথমিক প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭০ সালে পরিবারটি ভিক্টোরিয়া থেকে কুইন্সল্যান্ডের সানশাইন কোস্টে চলে আসে , যেখানে বব এবং লিন আরউইন ৪ একর (১.৬ হেক্টর) জমির উপর বিয়ারওয়াহ সরীসৃপ পার্ক প্রতিষ্ঠা করেন। তরুণ আরউইন তার বাবার সাথে আউটব্যাকে টিকটিকি, বিষাক্ত সাপ এবং কুমির ধরার অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন এবং তিনি আহত বা পরিত্যক্ত ক্যাঙ্গারু , ওয়ালাবি এবং পার্কে গৃহীত পাখিদের লালন-পালন এবং পুনর্বাসনে সহায়তা করেছিলেন।
১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে, ইস্ট কোস্ট ক্রোকোডাইল ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামের জন্য অভিযানে তার বাবার সাথে যান আরউইন। এই প্রোগ্রামটি ছিল সরকার-স্পন্সরকৃত একটি প্রকল্প, যার লক্ষ্য ছিল কুমির শিকার কমানোর জন্য কম জনবহুল এলাকায় বা বিয়ারওয়াহ পার্ক সহ অভয়ারণ্যে কুমির স্থানান্তর করা। এমনই একটি ভ্রমণে, যখন আরউইনের বয়স ছিল নয় বছর, তিনি প্রথমবারের মতো একটি কুমিরের পিঠে লাফিয়ে কুমিরকে দমন করার চেষ্টা করেন। শীঘ্রই তিনি এই কৌশলে বেশ পারদর্শী হয়ে ওঠেন।
শৈশব এবং পরবর্তী জীবন:
মায়ের জন্মদিনে মেলবোর্ন, ভিক্টোরিয়ায় জন্মগ্রহণ করা আর উইন শৈশবে বাবা বব আরউইন এবং মা লিনের সাথে কুইন্সল্যান্ডে চলে আসেন।
আর উইন তার বাবাকে একজন বণ্যপ্রাণি বিশেষজ্ঞ বলে অভিহিত করেন যার আগ্রহ ছিল হারপেটোলজি বা চর্মরোগ নিয়ে এবং তার মা ছিলেন বণ্যপ্রাণি পুণর্বাসনকারি। কুইন্সল্যান্ডে আসার পর বব এবং লিন আর উইন একটি সরীসৃপ এবং প্রাণির পার্ক স্থাপন করেন। স্টিভ এখানেই কুমির এবং অন্যান্য সরীসৃপের সান্নিধ্যে বড় হয়ে ওঠেন।
পার্কটির সাথে আরউইন নানারূপে যুক্ত হয়ে ওঠেন; যার মধ্যে প্রাণীদের খাওয়ানো, যত্ন নেওয়া এবং রক্ষণাবেক্ষণ অন্তর্ভুক্ত ছিল। ষষ্ঠ জন্মদিনে তাকে একটি ১২ ফুট লম্বা স্ক্রাব পাইথন উপহার দেয়া হয়। ছোটবেলা থেকেই বাবার কাছে সরীসৃপ সম্পর্কে ধারণা লাভ করা আরউইন নয় বছর বয়সে কুমিরের (রক্ষণাবেক্ষণ) শুরু করেন। সেই বছরই তার বাবার তত্ত্বাবধানে আরউইন প্রথমবার কুমিরের সাথে কুস্তিতে লিপ্ত হন।
তিনি ক্যালোউনড্রা স্টেট হাই স্কুল থেকে ১৯৭৯ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। দ্রুতই তিনি নর্দার্ন কুইন্সল্যান্ডে চলে আসেন এবং এথানে কুমির শিকারী হয়ে ওঠেন। তিনি জনবসতিতে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টিকারী কুমিরগুলোকে সরিয়ে আনেন।
কুমিরগুলোকে পার্কে নিয়ে যেতে পারার শর্তসাপেক্ষে বিনামূল্যে তিনি এই কাজ করেন। আর উইন পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে কুইন্সল্যান্ড সরকারের ইস্ট কোস্ট ক্রোকোডাইল ম্যানেজমেণ্ট প্রোগ্রামে সেচ্ছাসেবকরূপে অংশগ্রহণ করেন।
ক্যারিয়ার:
আরউইন দায়িত্ব নেবার আগ পর্যন্ত পার্কটি একটি পারিবারিক বাণিজ্য ছিল। তিনি পার্কটি চালানোর ভার গ্রহণ করেন যাকে বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া জু বলা হয়। ১৯৯২ সালে তিনি সরীসৃপ এবং ওয়াইল্ড লাইফ বিষয়ক এক পর্বের টিভি অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করেন।
১৯৯১তে পার্কের প্রদর্শনীতে পারফরম্যান্সের সময় তিনি টেরি রাইনসের সাথে পরিচিত হয়। এই জুটি ১৯৯২ সালের জুনে ওরিগনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তাদের মধুচন্দ্রিমায় কুমির ধরার দৃশ্য নিয়ে দি ক্রোকোডাইল হাণ্টার-এর প্রথম পর্ব প্রচারিত হয়; দৃশ্যগুলো ধারণ করেন জন স্টাইনটন।
অস্ট্রেলিয়ান টিভির পর্দায় সিরিজটির অভিষেক ঘটে ১৯৯৬ সালে এবং পরের বছরে উত্তর আমেরিকার টেলিভিশনে স্থান দখল করে নেয়। দি ক্রোকোডাইল হাণ্টার যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে সাফল্য অর্জন করে।
১৯৯৮ সালে তিনি প্রযোজক এবং পরিচালক মার্ক স্ট্রিকসনের সাথে কাজ চালিয়ে যান এবং দি টেন ডেডলিয়েস্ট স্নেকস ইন দি ওয়ার্ল্ড অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন। ১৯৯৯ সালের মধ্যেই তিনি আমেরিকায় বিপুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন এবং দি টুনাইট শো উইথ জে লেনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন।
এর মাঝেই দি ক্রোকোডাইল হাণ্টার সিরিজটি ১৩৭ টিরও বেশি দেশে প্রচারিত হতে থাকে যা প্রায় ৫০ কোটি মানুষের কাছে পৌছে। তার উচ্ছসিত এবং উদ্যমী উপস্থাপনা, অস্ট্রেলিয়ান বাচনভঙ্গি, স্বভাবসুলভ খাকি শর্টস এবং ক্যাচফ্রেস ক্রিকি দুনিয়াজুড়ে পরিচিত হয়ে ওঠে।
প্রকৃতির সাথে অসংখ্য মানুষের শখ্য গড়ে তোলার জন্য স্যার ডেভিড এটেনবরা তার তারিফ করেন এবং বলেন সে তাদের শিখিয়েছিল কত অসাধারণ এবং উত্তেজনাকর ছিল এটি (প্রকৃতি), সে ছিল একজন জন্মগত সমন্বয়কারী।
চলচ্চিত্র:
২০০১ সালে এডি মারফির চলচ্চিত্র ডক্টর ডুলিটল ২ এ আর উইন একটি ছোট চরিত্রে অংশ নেন। আরউইনের প্রধান চরিত্রে অভিনীত একমাত্র চলচ্চিত্র হল ২০০২ এর দি ক্রোকোডাইল হাণ্টার:কোয়ালিশন কোর্স। চলচ্চিত্রটিতে আরউইন (যিনি নিজের চরিত্রেরই রূপদান করেন এবং অসংখ্য ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্যে নিজেই অংশ নেন) ভুল করে কিছু সিআইএ এজেণ্টকে পশু চোরাচালানি বলে মনে করেন।
তিনি একটি কুমিরকে ধরে নিয়ে যাবার হাত থেকে রক্ষা করেন যেটি, তার অগোচরে একটি ট্র্যাকিং ট্রান্সমিটার গিলে ফেলে।চলচ্চিত্রটি কমেডি শাখায় শ্রেষ্ঠ পারিবারিক পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার জেতে ইয়ং আর্টিস্ট এওয়ার্ডসে।
চলচ্চিত্রটি তৈরিতে ব্যয় হয় $১২ মিলিয়ন এবং তা $৩৩ মিলিয়ন আয় করে। ছবিটির প্রচারের জন্য আরউইন একটি এনিমেটেড শর্টে অংশ নেন যা এনিম্যাক্স এণ্টারটেইনমেণ্ট তৈরি করে ইণ্টারমিক্সের জন্য।
২০০২ সালে আরউইনরা উইগলসের ভিডিও এবং ডিভিডি উইগলি সাফারিতে অংশ গ্রহণ করেন। এটির মধ্যে আরউইন থিম সং যেমন- ক্রোকোডাইল হাণ্টার, অস্ট্রেলিয়ান জু, স্নেকস এবং উই’র দি ক্রোকোডাইল বার্ড ছিল।
ডিভিডির কভারে আর উইনকে বিশেষভাবে দেখানো হয় যা সমগ্র চলচ্চিত্রেও অব্যাহত রাখে। ২০০৩ সালে এক রিপোর্ট অনুসারে আরউইনের একটি টক শোতে অংশ নেবার কথা থাকলেও তা পরে আর তৈরি হয়নি।
[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ২০০৬ সালে আর উইন এনিমেশন চলচ্চিত্র হ্যাপি ফিটের জন্য কণ্ঠদান করেন, যাতে তার কণ্ঠদানকারি চরিত্রট ছিল একটি এলিফ্যাণ্ট সিল। চলচ্চিত্রটি তৈরি হবার পরবর্তি সময়ে আর উইন মৃত্যুবরণ করেন এবং ছবিটি তার নামে উংসর্গ করা হয়।
এনিমেল প্ল্যানেট এবং পরবর্তি প্রজেক্টসমূহ:
এনিমেল প্ল্যানেট শেষ পর্ব স্টিভ’স লাস্ট এডভেঞ্চার এর মাধ্যমে দি ক্রোকোডাইল হাণ্টারের সমাপ্তি ঘোষণা করে। তিন ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত শেষ পর্বে হিমালয়, ইয়াঙ্গজে নদী, বর্নিও এবং ক্রুগার ন্যাশনাল পার্ক সহ স্টিভের বিশ্বময় অভিযান তুলে ধরা হয়। আরউইন এনিমেল প্ল্যানেটের তথ্যচিত্র ক্রক ফাইলস, দি ক্রোকোডাইল হাণ্টার ডায়ারিজের মাধ্যমে এগিয়ে চলেন।
২০০৬ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ট্রেলিয়া সপ্তাহ উংযাপনের অংশ হিসেবে আর উইন লস এঞ্জেলস, ক্যালিফোর্নিয়ার পাউল প্যাভিলিয়ন, ইউসিএলএ তে হাজির হন। “দি টুনাইট শো উইথ জে লেনো”তে আর উইন বলেন যে ডিসকভারি কিডস তার মেয়ে বিন্ডি স্যু আরউইনএর জন্য একট প্রদর্শনী পরিচালনা করবে।
জাংগল গার্ল নামের শোটি দি উইগলার্স চলচ্চিত্র থেকে ছোট হবে বলে পরামর্শ দেয়া হয় যার গল্প ঘিরে থাকবে গান। অস্ট্রেলিয়ান শিশুদের অনুষ্ঠান দি উইগলসের একটি ফিচরদৈর্ঘ্যের পর্ব আর উইনকে উংসর্গ করা হয় এই পর্ব তার স্ত্রী এবং তাকে ব্যাপকভাবে প্রকাশ করা হয়।
এই শোতে ক্রোকোডাইল হাণ্টার, বিগ স্টিভ আর উইন অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
২০০৬ সালে আমেরিকান নেট ওয়ার্ক চ্যানেল দি ট্রাভেল চ্যানেল একটি অনুষ্ঠান প্রচার করা হয় যাতে আর উইন এবং তার পরিবারের বিশ্বময় যাত্রার অভিজ্ঞতা দেখানো হয়।
মিডিয়া সংশ্লিষ্টতা:
আরউইন বেশকিছু মিডিয়া কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। তিনি আগ্রহভরে অস্ট্রেলিয়ান কোয়ারানটাইন এন্ড ইন্সপেকসন সার্ভিসের সাথে যুক্ত হন অস্ট্রেলিয়ার কঠোর কাস্টমস প্রয়োজনীয়তার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে।
২০০৪ সালে তিনি দি ঘান-এর ব্র্যান্ড এম্বাসেডর নিযুক্ত হন; এটি একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন যা এডিলেইড থেকে মধ্য অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চল এলিস স্প্রিংসে যাতায়াত করে। তার সাথে চুক্তির সময় ট্রেন লাইনটি উত্তরাঞ্চলীয় তীরের ডারউইন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। কিছু সময়ের জন্য টয়োটা তাকে স্পন্সর করে।
আরউইন কুইন্সল্যান্ডসহ সমগ্র অস্ট্রেলিয়ার পর্যটন শিল্পের প্রসারে অবদান রাখেন। ২০০২ সালে অস্ট্রেলিয়ান জু কুইন্সল্যান্ডের শীর্ষ পর্যটন আকর্ষণ স্থানরূপে নির্বাচিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তার অর্থ দাড়ায় তিনি প্রায়ই সেখানে পর্যটন আকর্ষণরূপে অস্ট্রেলিয়াকে তুলে ধরেন
তিনি মানুষকে সুবিবেচিত পর্যটনে আগ্রহী হতে আহ্বান জানান এবং কচ্ছপের খোল ও তিমির স্যুপ না কেনার মাধ্যমে বে-আইনি পশু নিধনকে নিরুৎসাহিত করেন।
What's Your Reaction?






