মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনী | Biography of Michael Madhusudan Dutt
মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনী | Biography of Michael Madhusudan Dutt

জন্ম:
মাইকেল মধুসূদন দত্ত জীবনী মাইকেল মধুসূদন দত্ত মাইকেল মধুসূদন দত্ত জীবনী মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা সাহিত্যের একজন বিশিষ্ট কবি ও নাট্যকার ছিলেন।মধুসূদন দত্ত 1824 খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।
শিক্ষাজীবন
মা জাহ্নবী দেবীর কাছে মধুসূদনের প্রাথমিক শিক্ষার সূত্রপাত হয়। জাহ্নবী দেবীই তাঁকে রামায়ণ, মহাভারত, হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি ইত্যাদির সঙ্গে পরিচিত করে তুলেছিলেন। সাগরদাঁড়িতেই মধুসূদনের ছেলেবেলা কেটেছিল। সাগরদাঁড়ির পাশের গ্রামের শেখপুরা মসজিদের বিদ্বান ইমাম মুফতি লুৎফুল হকের কাছে মধুসূদন বাল্যকালে বাংলা, ফারসি ও আরবি শিক্ষা করেন। তেরো বছর বয়সে মধুসূদন কলকাতায় আসেন। স্থানীয় একটি স্কুলে কিছুদিন পড়ার পর তিনি হিন্দু কলেজে (বর্তমানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন।
১৮৪৩ সালে রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে মধুসূদন খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ওই বছরই ৮ ফেব্রুয়ারি ১৮ বছর বয়সে মিশন রো-তে অবস্থিত ওল্ড মিশন চার্চ নামে একটি অ্যাংলিকান গির্জায় গিয়ে তিনি খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হন। তাঁকে দীক্ষিত করেছিলেন পাদরি ডিলট্রি। তিনিই তাঁর "মাইকেল" নামটি রাখেন। এরপর মধুসূদন পরিচিত হন "মাইকেল মধুসূদন দত্ত" নামে। মধুসূদন খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করলে হিন্দুসমাজে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। রাজনারায়ণ দত্ত তাঁকে ত্যাজ্যপুত্র ঘোষণা করেন।
কর্মজীবন
মধুসূদন মাদ্রাজেও বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারেন নি। স্থানীয় খ্রিষ্টান ও ইংরেজদের সহায়তায় তিনি একটি স্কুলে ইংরেজি শিক্ষকের চাকরি পান। তবে বেতন যা পেতেন, তাতে তার ব্যয়সংকুলান হত না। এই সময় তাই তিনি ইংরেজি পত্রপত্রিকায় লিখতে শুরু করেন। মাদ্রাজ ক্রনিকল পত্রিকায় ছদ্মনামে তার কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে। হিন্দু ক্রনিকল নামে একটি পত্রিকাও সম্পাদনা করেছিলেন তিনি। কিন্তু অল্পকালের মধ্যেই অর্থাভাবে পত্রিকাটি বন্ধ করে দিতে হয়। পঁচিশ বছর বয়সে নিদারুণ দারিদ্র্যের মধ্যেই তিনি দ্য ক্যাপটিভ লেডি তার প্রথম কাব্যটির রচনা করেন। কবি ও দক্ষ ইংরেজি লেখক হিসেবে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে।
বিবাহ
মাদ্রাজে আসার কিছুকাল পরেই মধুসূদন রেবেকা ম্যাকটিভিস নামে এক ইংরেজ যুবতীকে বিবাহ করেন। উভয়ের দাম্পত্যজীবন আট বছর স্থায়ী হয়েছিল। রেবেকার গর্ভে মধুসূদনের দুই পুত্র ও দুই কন্যার জন্ম হয়। মাদ্রাজ জীবনের শেষ পর্বে রেবেকার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার অল্পকাল পরে মধুসূদন এমিলিয়া হেনরিয়েটা সোফিয়া নামে এক ফরাসি তরুণীকে বিবাহ করেন। হেনরিয়েটা মধুসূদনের সারাজীবনের সঙ্গিনী ছিলেন।
ভাষাগত দক্ষতা:
মাইকেল মধুসূদন দত্ত ছিলেন বহু ভাষাবিদ। মাতৃভাষা ছাড়া তিনি আরো বারোটি ভাষা জানতেন। শিশু কালে গ্রামের টোল থেকে ফারসি ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে তার ভাষা শিক্ষার শুরু হয়। তিনি ইংরেজি ছাড়াও ল্যাটিন, গ্রিক, ফারসি, হিব্রু, তেলুগু, তামিল ইত্যাদি ভাষায় অনায়াসে কথা বলতে পারতেন। তিনি এমনকি ফারসি ও ইতালীয় ভাষায় কবিতাও লিখতে পারতেন।
মেঘনাদবধ কাব্য
মধুসূদন দত্তের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি হচ্ছে -- অমিত্রাক্ষর ছন্দে রামায়ণ উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত মেঘনাদবধ কাব্য নামক মহাকাব্যটি। চরিত্র-চিত্র হিসেবে রয়েছেন : রাবণ, ইন্দ্রজিৎ, সীতা, সরমা, প্রমীলা প্রমুখ। তিনি তার কাব্যকে নয়টি সর্গে বিভক্ত করেছেন এবং সংস্কৃত অলঙ্কারশাস্ত্র অনুযায়ী এতে নগর, বন, উপবন, শৈল, সমুদ্র, প্রভাত, সন্ধ্যা, যুদ্ধ, মন্ত্রণা প্রভৃতির সমাবেশও করেছেন। কিন্তু সর্গান্তে তিনি নতুন ছন্দ ব্যবহার করেন নি, সর্গশেষে পরবর্তী সর্গকথা আভাসিত করেন নি। যদিও তিনি বলেছিলেন,
তবুও কাব্যে করুণ রসেরই জয় হয়েছে। মেঘনাদবধ কাব্য রামায়ণ-আহৃত কাহিনীর পুনরাবৃত্তি নয়—এটি নবজাগ্রত বাঙালির দৃষ্টি নিয়তি-লাঞ্ছিত নবমানবতাবোধের সকরুণ মহাকাব্যের রূপে অপূর্ব গীতি-কাব্য। মেঘনাদবধ কাব্য এ দিক দিয়ে বাংলা কাব্য সাহিত্যে একক সৃষ্টি।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের সাহিত্যকর্ম :
মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্য –
তিলোত্তমা সম্ভব, ১৮৬৩
দ্য ক্যাপটিভ লেডি, ১৮৪৯
ব্রজাঙ্গনা কাব্য, ১৮৬১
মাইকেল মধুসূদন দত্তের মহাকাব্য –
মেঘনাদবধ কাব্য, ১৮৬১
মাইকেল মধুসূদন দত্তের সনেট –
চতুর্দশপদী কবিতাবলী, ১৮৬৫
মাইকেল মধুসূদন দত্তের পত্রকাব্য –
বীরাঙ্গনা, ১৮৬২
মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাটক –
শর্মিষ্ঠা ১৮৫৯ বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক নাটক।
কৃষ্ণকুমারী ১৮৬১
পদ্মাবতী ১৮৬০
মায়াকানন
মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রহসন –
বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ ১৮৬০
একেই কি বলে সভ্যতা ১৮৬০
মৃত্য
মধুসূদনের শেষ জীবন চরম দুঃখ ও দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। আইন ব্যবসায়ে তিনি তেমন সাফল্য লাভ করতে পারেন নি। তাছাড়া অমিতব্যয়ী স্বভাবের জন্য তিনি ঋণগ্রস্তও হয়ে পড়েন। ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ জুন আলিপুর জেনারেল হাসপাতালে কপর্দকহীন (অর্থাভাবে) অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন এবং তাকে কলকাতার সার্কুলার রোডে সমাধি দেওয়া হয়। মহাকবি জীবনের অন্তিম পর্যায়ে জন্মভূমির প্রতি তার সুগভীর ভালোবাসার চিহ্ন রেখে গেছেন অবিস্মরণীয় পংক্তিমালায়।
What's Your Reaction?






