ফররুখ আহমদ এর জীবন কাহিনী |Biography of Farrukh Ahmad
ফররুখ আহমদ এর জীবন কাহিনী |Biography of Farrukh Ahmad

জন্ম |
১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে (তৎকালীন যশোর জেলার অন্তর্গত) মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মাঝাইল গ্রামের সৈয়দ বংশে। |
বাবা |
সৈয়দ হাতেম আলী |
মা |
রওশন আখতার |
মৃত্যু |
১৯৭৪ সালের ১৯শে অক্টোবর ঢাকায় ইন্তেকাল করেন |
জন্ম ও পরিবার
সৈয়দ ফররুখ আহমদের জন্ম ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে (তৎকালীন যশোর জেলার অন্তর্গত) মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মাঝাইল গ্রামের সৈয়দ বংশে। তার বাবা সৈয়দ হাতেম আলী ছিলেন একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর। ফররুখ আহমদের মায়ের নাম রওশন আখতার।
১৯৪২ সালের নভেম্বর মাসে আপন খালাতো বোন সৈয়দা তৈয়বা খাতুন (লিলি)-এর সঙ্গে ফররুখ আহমদের বিয়ে হয়।[৩] তার নিজের বিয়ে উপলক্ষে ফররুখ 'উপহার' নামে একটি কবিতা লেখেন যা সওগাত পত্রিকায় অগ্রহায়ণ ১৩৪৯ সংখ্যায় ছাপা হয়।
ফররুখ আহমদের ছেলে-মেয়ে এগারো জন। তারা হলেন: সৈয়দা শামারুখ বানু, সৈয়দা লালারুখ বানু, সৈয়দ আবদুল্লাহল মাহমুদ, সৈয়দ আবদুল্লাহেল মাসুদ, সৈয়দ মনজুরে এলাহি, সৈয়দা ইয়াসমিন বানু, সৈয়দ মুহম্মদ আখতারুজ্জামান (আহমদ আখতার), সৈয়দ মুহম্মদ ওয়হিদুজ্জামান, সৈয়দ মুখলিসুর রহমান, সৈয়দ খলিলুর রহমান ও সৈয়দ মুহম্মদ আবদুহু।[২][৪]
শিক্ষাজীবন
ফররুখ আহমদ খুলনা জিলা স্কুল থেকে ১৯৩৭ সালে ম্যাট্রিক এবং কলকাতার রিপন কলেজ থেকে ১৯৩৯ সালে আই.এ. পাস করেন। এরপর স্কটিশ চার্চ কলেজে দর্শন এবং ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি বামপন্থী রাজনীতিতে ঝুঁকে পড়েন। তবে চল্লিশ-এর দশকে তার রাজনৈতিক বিশ্বাসে পরিবর্তন আসে। তিনি ভারত বিভাগ তথা পাকিস্তান আন্দোলন সমর্থন করেন।
কর্মজীবন
ফররুখ আহমদের কর্মজীবন শুরু হয় কলকাতায়। তিনি ১৯৪৩ সালে আই.জি.প্রিজন অফিসে, ১৯৪৪ সালে সিভিল সাপ্লাইতে এবং ১৯৪৬ সালে জলপাইগুড়িতে একটি ফার্মে চাকরি করেন। ১৯৪৫ সালে তিনি মাসিক মোহাম্মদীর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। তবে শেষ পর্যন্ত স্থায়ীভাবে চাকরি করেন ঢাকা বেতারে। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ সালে ফররুখ আহমদ কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে এসে ঢাকা বেতারে যোগ দেন। এখানেই প্রথমে অনিয়মিত হিসেবে এবং পরে নিয়মিত স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।
মরণোত্তর পুরস্কার
১৯৭৭ একুশে পদক।
১৯৭৮ স্বাধীনতা পুরস্কার।
১৯৭৯ ইসলামিক ফাউন্ডেশন পুরস্কার।
১৯৮০ জুন মাসে বাংলা একাডেমী কতর্ৃক 'ফররুখ আহমদ রচনাবলি', ১ম খণ্ড প্রকাশিত।
১৯৮১ জুন মাসে বাংলা একাডেমী কতর্ৃক 'ফররুখ আহমদ রচনাবলি', ২য় খণ্ড প্রকাশিত।
১৯৮২ ঢাকায় 'ফররুখ একাডেমী' প্রতিষ্ঠিত। প্রাতিষ্ঠানিক ফররুখ চর্চার শুরু।
১৯৮৩ আনত্মর্জাতিক মাতৃভাষা উদ্যাপন কমিটি কতর্ৃক অন্য নয়জন বিশিষ্ট ভাষা-সৈনিকের সাথে 'ভাষা-সৈনিক সংবর্ধনা ও পুরস্কার (মরণোত্তর)' প্রদান।
কাব্যগ্রন্থ
- সাত সাগরের মাঝি (ডিসেম্বর, ১৯৪৪)
- নতুন কবিতা (১৯৫০
- সিরাজাম মুনীরা (সেপ্টেম্বর, ১৯৫২)
- নৌফেল ও হাতেম (জুন, ১৯৬১)-কাব্যনাট্য
- মুহূর্তের কবিতা (সেপ্টেম্বর, ১৯৬৩)
- ধোলাই কাব্য (জানুয়ারি, ১৯৬৩)
- হাতেম তায়ী (মে, ১৯৬৬)-কাহিনীকাব্য
- নতুন লেখা (১৯৬৯)
- কাফেলা (অগাস্ট, ১৯৮০)
- হাবিদা মরুর কাহিনী (সেপ্টেম্বর, ১৯৮১)
- সিন্দাবাদ (অক্টোবর, ১৯৮৩)
- দিলরুবা (ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৪)
শিশুতোষ গ্রন্থ
- পাখির বাসা (১৯৬৫)
- হরফের ছড়া (১৯৭০)
- চাঁদের আসর (১৯৭০)
- ছড়ার আসর (১৯৭০)
- ফুলের জলসা (ডিসেম্বর, ১৯৮৫)
পুরস্কার
১৯৬০ সালে ফররুখ আহমদ বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। কবি ফররুখ আহমদ ১৯৬৫ সনে প্রেসিডেন্ট পদক প্রাইড অব পারফরমেন্স এবং ১৯৬৬ সালে পান আদমজী সাহিত্য পুরস্কার ও ইউনেস্কো পুরস্কার। ১৯৭৭ ও ১৯৮০ সালে তাকে যথাক্রমে মরণোত্তর একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়।
মৃত্যু
ফররুখ আহমদ ১৯৭৪ সালের ১৯শে অক্টোবর ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। তিনি তার কবিতায় সমাজের অবহেলিত মানুষের কথা লিখে গেলেও তার জীবনে তাকে বহু দুঃখ কষ্ঠের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করতে হয়েছে। মূলত ইসলামী আদর্শ লালন করার কারণেই তাকে এত ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। ঢাকা বেতার থেকে তার চাকুরী চলে যায়। তার এক ছেলে ডাক্তারি পড়ছিল, টাকার অভাবে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয়। চিকিৎসার অভাবে এক মেয়ে মারা যায়। তখন রমজান মাস ছিল। টাকার অভাবে ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে না খেয়েই রোজা রাখতেন তিনি। ২৭শে রমজান ইন্তেকাল করেন কবি। তাকে কোথায় দাফন করা হবে তা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। প্রখ্যাত সাংবাদিক আসাফউদ্দৌলা রেজাসহ অনেকেই সরকারিভাবে কোন জায়গা পাওয়া কিনা চেষ্টা করলেন। কিন্তু সরকারিভাবে কোন জায়গা পাওয়া যায়নি। অবশেষে কবি বেনজীর আহমদ তার শাহজাহান পুরের পারিবারিক গোরস্থানে কবিকে দাফন করার জায়গা দান করেন। কবি ফররুখ আহমদের করুণ পরিণতি দেখে আহমদ ছফা লেখেন- “আজকের সমগ্র বাংলা সাহিত্যে ফররুখ আহমদের মত একজনও শক্তিশালী স্রষ্টা নেই। এমন একজন স্রষ্টা অনাহারে রেখে তিলে তিলে মরতে বাধ্য করেছি আমরা। ভবিষ্যত বংশধর আমাদের ক্ষমা করবে না।
sourse: bn.wikipedia
What's Your Reaction?






