অধ্যক্ষ মোঃ মতিউর রহমান জীবনী | Biography of Motiur Rahman
অধ্যক্ষ মোঃ মতিউর রহমান জীবনী | Biography of Matiur Rahman

জন্ম |
মতিউর রহমান ১৯৪২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। |
শিক্ষা |
মতিউর রহমান আকুয়া মডেল প্রাইমারি স্কুল থেকে ১৯৫৩ সনে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন |
কর্মজীবন |
তিউর রহমান দীর্ঘ সময় ময়মনসিংহের আলমগীর মনসুর মেমোরিয়াল কলেজের (মিন্টু কলেজ) অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। |
মৃত্যু |
মতিউর ২৭ আগস্ট ২০২৩ তারিখে ময়মনসিংহের নেক্সাস কার্ডিয়াক হাসপাতাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। |
জন্ম ও পারিবারিক জীবন
মতিউর রহমান ১৯৪২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবদুর রেজ্জাক এবং মায়ের নাম মেহেরুন্নেসা খাতুন। বিবাহিত জীবনে তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। তার ছেলে মোহিত উর রহমান শান্ত ময়মনসিংহ-৪ আসন থেকে ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর হয়ে সংসদ সদস্য হিসাবে জয়লাভ করেন।
শিক্ষা জীবন
মতিউর রহমান আকুয়া মডেল প্রাইমারি স্কুল থেকে ১৯৫৩ সনে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। ১৯৫৪ সনে ময়মনসিংহ জেলা স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখা-পড়া করেন। এরপর তিনি নকলা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি সম্পন্ন করেন। নবম ও দশম শ্রেণি পর্যন্ত ময়মনসিংহের মৃত্যুঞ্জয় স্কুলে পড়াশুনা করেন এবং ১৯৫৮ সনে মেট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ থেকে ১৯৬১ সনে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ১৯৬৪ সনে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৬ সনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হয়ে ১৯৬৭ সনে এম.এস.সি. সম্পন্ন করেন।
কর্মজীবন
মতিউর রহমান দীর্ঘ সময় ময়মনসিংহের আলমগীর মনসুর মেমোরিয়াল কলেজের (মিন্টু কলেজ) অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জামালপুর জেলার নান্দিনা কলেজ এবং ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে প্রাণিবিদ্যার শিক্ষক হিসেবে চাকরি করেন। তিনি স্বল্পকালীন সময়ের জন্য ময়মনসিংহ কলেজেও শিক্ষকতা করেন। তিনি গফরগাঁও থানার পাঁচবাগ উচ্চ বিদ্যালয় এবং মনোহরদি হাতিরদিয়া ছাদত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে বি.এস.সি. শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
রাজনৈতিক জীবন
মতিউর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তৎকালীন ঢাকা হল বর্তমানে ড. মুহম্মদ শহিদুল্লাহ হলের ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। রাজনৈতিক জীবনে মতিউর রহমান দুইবার ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ১৯৯৬ সাল থেকে ১৮ বছর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে দুইবার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতীয় সংসদের ১৪৯ (ময়মনসিংহ-৪) আসন থেকে ১৯৮৬ সালের তৃতীয় ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০০৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে তিনি জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নবম সংসদে তিনি রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি’র সভাপতি, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি’র সদস্য, জাতীয় সার সমন্বয় ও বিতরণ কমিটি’র সদস্য, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সদস্য, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এর বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর সিনেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ১৯৯৬ সনে একবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মেম্বার এবং ২০০৮ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পরপর তিনবার সিন্ডিকেট মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি স্বাধীনতার পর থেকে মোট তিনবার ময়মনসিংহ পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান
মতিউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষক ও সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ঢালু যুব শিবিরের ইনচার্জ ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরে তার নেতৃত্বে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর সঙ্গে তিনি মুক্ত ময়মনসিংহে প্রবেশ করেন।
পুরস্কার ও সম্মাননা
মতিউর রহমান রাজনীতি, শিক্ষা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একাধিক পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ইউনাইটেড কালচারাল কনভেনশন, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ২০০৫ সালে ‘আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার’ পদকে ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি আন্তর্জাতিক জীবনী কেন্দ্র ইংল্যান্ড কর্তৃক ২০০২ সালে ২১ শতকের অসামান্য বুদ্ধিজীবী’ পদকে ভূষিত হন। তিনি অভিনয়, নাটক, আবৃত্তিসহ নানা প্রকার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ১৯৬৭-৬৮ সেশনে প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে ফুটবল খেলা প্রতিযোগিতায় বিশেষ সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য তিনি ২০২২ সালে একুশে পদক লাভ করেন।
মৃত্যু
মতিউর ২৭ আগস্ট ২০২৩ তারিখে ময়মনসিংহের নেক্সাস কার্ডিয়াক হাসপাতাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
What's Your Reaction?






