অধ্যাপক জিম আল খলিলী এর জীবনী | Biography of Jim Al-Khalili

অধ্যাপক জিম আল খলিলী এর জীবনী | Biography of Jim Al-Khalili

May 15, 2025 - 14:37
May 23, 2025 - 23:53
 0  2
অধ্যাপক জিম আল খলিলী এর জীবনী | Biography of Jim Al-Khalili

প্রথম প্রকৃত বিজ্ঞানী -মূল : অধ্যাপক জিম আল খলিলী 

জামিল সাদিক বা জিম আল-খালিলি 

সিবিই এফআরএস (আরবি: جميل صادق الخليلي; জন্ম ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৬২) একজন ইরাকি-ব্রিটিশ তাত্ত্বিক পদার্থবিদ, লেখক এবং সম্প্রচারক। তিনি তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং সারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানবিষয়ক জনসংযোগ বিভাগের চেয়ারম্যান। তিনি একজন নিয়মিত সম্প্রচারক এবং বিবিসি রেডিও ও টেলিভিশনের বিজ্ঞান অনুষ্ঠানের উপস্থাপক এবং অন্যান্য ব্রিটিশ মাধ্যমগুলোর বিজ্ঞান সম্পর্কিত বিষয়সমূহের ভাষ্যকার।

২০১৪ সালে, খালিলিকে যুক্তরাজ্যের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ফিজিক্যাল সায়েন্সেস রিসার্চ কাউন্সিল দ্বারা রাইজের (রিকোগনাইজিং ইন্সপাইরেশনাল সায়েন্টিস্টস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারস) নেতা হিসেবে নাম যোগ করা হয়। তিনি ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাজ্য মানবতাবাদীর সভাপতি ছিলেন।

প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা

খালিলি ১৯৬২ সালে বাগদাদে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন ইরাকি বিমান বাহিনীর একজন প্রকৌশলী এবং তার ইংরেজ মা ছিলেন একজন গ্রন্থাগারিক। খালিলি ১৯৭৯ সালে যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৮২ সাল পর্যন্ত তিন বছরের মধ্যে এ-লেভেল শেষ করার পর[] তিনি সারে বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন করেন এবং ১৯৮৬ সালে বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরি থেকে চাকরির প্রস্তাব পেলেও তা গ্রহণ না করে নিউক্লিয়ার প্রতিক্রিয়া তত্ত্বে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য সারেতে থেকে যান, যা তিনি ১৯৮৯ সালে অর্জন করেন।

কর্মজীবন ও গবেষণা

খালিলি ১৯৮৯ সালে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন থেকে একটি বিজ্ঞান ও প্রকৌশল গবেষণা কাউন্সিল পোস্টডক্টরাল ফেলোশিপ লাভ করেন। ১৯৯১ সালে তিনি প্রথমে একজন গবেষণা সহকারী হিসেবে, তারপর একজন প্রভাষক হিসেবে সারে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন। ১৯৯৪ সালে খালিলিকে পাঁচ বছরের জন্য একটি ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ফিজিক্যাল সায়েন্সেস রিসার্চ কাউন্সিল (ইপিএসআরসি) অ্যাডভান্সড রিসার্চ ফেলোশিপ প্রদান করা হয়, এই সময়ে তিনি নিজেকে বহিরাগত পারমাণবিক নিউক্লিয়াসের গাণিতিক মডেলের একজন নেতৃস্থানীয় বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি তার ক্ষেত্রে নিজেকে ব্যাপকভাবে প্রকাশ করেছেন।

খালিলি সারে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের একজন অধ্যাপক, যেখানে তিনি বিজ্ঞানবিষয়ক জনসংযোগ বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করছেন। তিনি ব্রিটিশ সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনের একজন ট্রাস্টি (২০০৬-২০১২) এবং সহ-সভাপতি (২০০৮-২০১১) ছিলেন। তিনি একটি ইপিএসআরসি সিনিয়র মিডিয়া ফেলোশিপও অর্জন করেন।

খালিলি ২০০৭ সালে বিজ্ঞান যোগাযোগের জন্য রয়েল সোসাইটি অব লন্ডন মাইকেল ফ্যারাডে পুরস্কারে ভূষিত হন এবং ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্সের সম্মানিত ফেলো নির্বাচিত হন। তিনি ২০০০ সাল পর্যন্ত ইনস্টিটিউট অব ফিজিক্সের ফেলো ছিলেন, যখন তিনি ইনস্টিটিউটের পাবলিক অ্যাওয়ারনেস অব ফিজিক্স পুরস্কার পান।[১৫] তিনি যুক্তরাজ্যসহ সারা বিশ্বে বিশেষ করে ব্রিটিশ কাউন্সিলের জন্য ব্যাপকভাবে বক্তৃতা দিয়েছেন। তিনি ব্রিটিশ কাউন্সিল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাডভাইজরি গ্রুপের সদস্য, রয়েল সোসাইটির ইকুয়ালিটি অ্যান্ড ডাইভারসিটি প্যানেলের সদস্য, ওপেন ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগের একজন বহিরাগত পরীক্ষক, ওপেন এক্সেস জার্নাল পিএমসি ফিজিক্স এ'র সম্পাদকীয় বোর্ডের সদস্য এবং অ্যাডভান্সড সায়েন্স লেটারের সহযোগী সম্পাদক। তিনি চেল্টেনহ্যাম বিজ্ঞান উৎসবের উপদেষ্টা কমিটিরও একজন সদস্য।

২০০৭ সালে তিনি ন-কাল্পনিকের জন্য বিবিসি বেলি গিফোর্ড পুরস্কারের একজন বিচারক ছিলেন এবং দ্য বিগ ব্যাং ফেয়ারে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রকৌশল প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত ধাপের একজন খ্যাতিমান বিচারক ছিলেন। তিনি ২০০৮ সালের জন্মদিনের সম্মানে অর্ডার অফ দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ারের কর্মকর্তা নিযুক্ত হন। ২০১৩ সালে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব সায়েন্স (ডিএসসি) ডিগ্রি লাভ করেন। খালিলি ২০১৮ সালে রয়েল সোসাইটির একজন ফেলো নির্বাচিত হন এবং ২০২৩ সালে রয়েল একাডেমি অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একজন সম্মানিত ফেলো নির্বাচিত হন।

তিনি ২০২১ সালের জন্মদিনের সম্মানে বিজ্ঞানের সেবা এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিতে বিজ্ঞানবিষয়ক জনসংযোগ বিভাগের অর্ডার অফ দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (ওবিই) নিযুক্ত হন।

সম্প্রচার

একজন সম্প্রচারক হিসেবে, খালিলি প্রায়ই টেলিভিশন ও রেডিওতে থাকেন এবং ব্রিটিশ প্রেসের জন্য নিবন্ধ লেখেন। ২০০৪ সালে তিনি আইকন ফিল্মস দ্বারা প্রযোজিত চ্যানেল ৪ এর তথ্যচিত্র দ্য রিডল অব আইনস্টাইনস ব্রেন সহ-উপস্থাপনা করেন। উপস্থাপক হিসেবে তার জীবনে বড় বিরতি আসে ২০০৭ সালে, পরমাণু ও পারমাণবিক পদার্থবিদ্যা সম্পর্কে বোঝার ইতিহাস সম্পর্কে বিবিসি ফোর এ সম্প্রচারিত একটি তিন পর্বের ধারাবাহিক পরমাণুর মাধ্যমে। এটি "দ্য বিগ ব্যাং" নামক হরাইজনের একটি বিশেষ সংগ্রহশালাভুক্ত সংস্করণকে অনুসরণ করে নির্মাণ করা হয়েছিল।

২০০৯ সালের শুরুর দিকে খালিলি ৮ম থেকে ১৪শ শতাব্দীর মধ্যে ইসলামি বিশ্বে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের উল্লম্ফন সম্পর্কে বিবিসি ফোরের তিন পর্বের ধারাবাহিক বিজ্ঞান ও ইসলাম উপস্থাপন করেন। তিনি টুমরো'স ওয়ার্ল্ড, বিবিসি ফোর'স মাইন্ড গেমসদ্য সাউথ ব্যাঙ্ক শো থেকে শুরু করে বিবিসি ওয়ানের ব্যাং গোজ দ্য থিওরি প্রোগ্রামে অবদান রেখেছেন। ২০১১ সালের অক্টোবরে, তিনি রেডিও ফোরে বিখ্যাত সমসাময়িক বিজ্ঞানীদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠান শুরু করেন, যার নাম দ্য লাইফ সায়েন্টিফিক। এই ধারাবাহিকের প্রথম পর্বে স্যার পল নার্সের সাথে তার সাক্ষাৎকারটি দেখানো হয় । এরপর থেকে তিনি রিচার্ড ডকিন্স, অ্যালিস রবার্টস, জেমস লাভলক, স্টিভেন পিংকার, মার্টিন রিস, জসলিন বেল বার্নেল, মার্ক ওয়ালপোর্ট এবং টিম হান্টসহ উল্লেখযোগ্য বিজ্ঞানীদের একটি ধারাবাহিকে সাক্ষাৎকার নেন এবং অ্যাডাম রাদারফোর্ডের শোতে তিনি নিজেই সাক্ষাৎকার দেন।

খালিলি সারে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নিয়মিত "জিম মিটস..." সাক্ষাৎকারমূলক ধারাবাহিক হোস্ট করেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়। অতিথিদের মধ্যে স্যার ডেভিড অ্যাটনবারা, রবার্ট উইনস্টন, অধ্যাপক ব্রায়ান কক্স, রোয়ান উইলিয়ামস এবং ক্যান্টারবারির আর্চবিশপ অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।২০১১ সালে খালিলি বিবিসি ফোরে শক অ্যান্ড অ্যাওয়ে: দ্য স্টোরি অব ইলেক্ট্রিসিটি শিরোনামে একটি তিন পর্বের তথ্যচিত্র ধারাবাহিক হোস্ট করেন। ২০১২ সালে খালিলি বিবিসি টুতে একটি বিশেষ হরাইজন উপস্থাপন করেন, যেটি হিগস বোসন আবিষ্কারের অনুসন্ধানে সর্বশেষ বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি পরীক্ষা করে এবং সিইআরএন-এ বৃহৎ হ্যাড্রন সংঘর্ষক পরীক্ষার প্রাথমিক ফলাফলের সাথে পরামর্শ দেয় যে অধরা কণাটি সত্যিই বিদ্যমান।

প্রথম প্রকৃত বিজ্ঞানী

আইজ্যাক নিউটন সর্বকালের সেরা পদার্থবিজ্ঞানী- এই ব্যাপারে মোটামুটি সবাই একমত। নিউটনকে আধুনিক আলোকবিজ্ঞানের একমাত্র জনক বলা হয়ে থাকে। আমাদের স্কুলের পাঠ্যবইগুলোতেও, আমরা এমনটিই জেনে এসেছি কেননা বইগুলোতে তার লেন্স ও প্রিজমের পরীক্ষা, আলোর প্রকৃতি ও এর প্রতিফলন এবং আলোর প্রতিসরণ ও আলোর বিচ্ছুরণে রংধনু তৈরি ইত্যাদি বিষয়গুলো দ্বারা ভরপুর ছিল। কিন্তু একটি বিষয় অনেকেই জানেন না, আর আমি মনে করি এই বিষয়টা সকলের কাছে স্পষ্ট থাকা দরকার যে, আলোকবিজ্ঞানে নিউটনের অবদান রাখার পেছনে তার ৭০০ বছর আগের এক ব্যক্তি মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন।

৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান ইরাকে হাসান ইবনে হাইসাম নামে একজন বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পদার্থবিজ্ঞানে তার অবদান সন্দেহাতীতভাবে নিউটনের তুলনায় কোন অংশে কম নয়। অথচ পশ্চিমা বিশ্বের বেশির ভাগ লোক তার নামই শোনেনি। যেহেতু আমি নিজেই একজন পদার্থবিজ্ঞানী, আমার বিষয়ে তার অবদান দেখলে আমি অভিভূত হয়ে যাই। আমি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান যে আমি তার জীবনের কিছুটা গভীরে প্রবেশ করার সুযোগ পেয়েছি। সুযোগটা এসেছিল বিবিসির মাধ্যমে। তাঁরা মধ্যযুগের ইসলামী বিজ্ঞানীদের নিয়ে চার পর্বের ফিল্ম করেছিল, যার তিনটি পর্বেই আমার কাজ করার সুযোগ হয়েছে। আধুনিক পদ্ধতি বিজ্ঞানের প্রচলিত ইতিহাস থেকে জানা যায় যে প্রাচীন গ্রিক এবং ইউরোপীয় রেনেসাঁ যুগের মধ্যবর্তী সময়ে বিজ্ঞানের তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি।

 কিন্তু পশ্চিম ইউরোপ অন্ধকার যুগের মধ্যে ডুবে ছিল- তার অর্থ এই নয় যে পৃথিবীর সব জায়গাতেই বিজ্ঞান গবেষণা এরকম স্থবির ছিল। নবম শতাব্দী থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দী- এই সময়টুকু আসলে আরবীয় বিজ্ঞানের স্বর্ণযুগ হিসেবে চিহ্নিত। এই সময়টিতে গণিতশাস্ত্র, জ্যোতির্বিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, দর্শন ইত্যাদি সবগুলো বিষয়ের দারুণ অগ্রগতি হয়েছিল। আর এই সময়কালের সব মেধাবীর ভিড়ে ইবনে হাইসামের অবস্থান ছিল সবার উপরে। ইবনে হাইসামকে আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির জনক বলা হয়। আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকে সাধারণভাবে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় যে এটি হচ্ছে পর্যবেক্ষণ এবং পরিমাপের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে সেই তথ্য ব্যাখ্যার জন্য তত্ত্ব তৈরি এবং সেই তত্ত্বের সত্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে কোন ঘটনার অনুসন্ধান, নতুন কোন জ্ঞান অর্জন কিংবা পূর্ববর্তী কোন জ্ঞানের সংশোধন বা একীভূতকরণ।

এভাবেই আমরা আজকের দিনে বিজ্ঞানের কাজগুলো করে থাকি এবং ঠিক এই জন্যই আমি বিজ্ঞানের যেসব উন্নয়ন হয়েছে তার ওপর আস্থা রাখতে পারি। কিন্তু প্রায়ই দাবি করা হয় যে সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ফ্রান্সিস বেকন এবং রেনে দেকার্তের আগে আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কিন্তু আমার মনে এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই যে ইবনে হাইসাম এক্ষেত্রে সবার আগে। এমনকি ব্যবহারিক পরীক্ষণের প্রতি এবং একই ফলাফল পুনঃপরীক্ষণের মাধ্যমে নেয়ার প্রতি জোর দেয়ার জন্য তাকে ‘পৃথিবীর প্রথম প্রকৃত বিজ্ঞানী’ও বলা হয়ে থাকে। আলোর ব্যাখ্যা তিনিই সর্বপ্রথম কোন বস্তুকে আমরা কিভাবে দেখি তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন পরীক্ষণের মাধ্যমে আলোর নিঃসরণ তত্ত্ব ভুল প্রমাণ করেছিলেন। এই তত্ত্বে বলা হয়েছিল আমাদের চোখ থেকে আলো গিয়ে কোন বস্তুর ওপর পড়লে সেটি আলোকিত হয়।

 প্লেটো, ইউক্লিড এবং টলেমির মত বিখ্যাত বিজ্ঞানীরাও এই তত্ত্বকে সঠিক মনে করতেন। কোনো বস্তু থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে পড়লে তখন আমরা সে বস্তুকে দেখতে পাই- এই আধুনিক ধারণা তিনিই প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি গাণিতিকভাবে এই প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন, যা এর পূর্বে আর কোন বিজ্ঞানী করেননি। তাই তাকে সর্বপ্রথম তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানীও বলা যেতে পারে। তিনি পিনহোল ক্যামেরা এবং প্রতিসরণের সূত্র আবিষ্কারের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত।

 এ ছাড়াও তিনি আলোকে বিচ্ছুরিত করে তার উপাদান রংসমূহে বিভক্ত করার প্রথম পরীক্ষণটিও করেছিলেন এবং ছায়া, রংধনু ও গ্রহণ নিয়েও কাজ করেছিলেন। বায়ুমন্ডলে সূর্যের আলোর অপবর্তন পর্যবেক্ষণ করে তিনি আগের থেকেও আরো সঠিকভাবে বায়ুমন্ডলের উচ্চতা অনুমান করেছিলেন। তিনি বায়ুমন্ডলের উচ্চতা পেয়েছিলেন ১০০ কিলোমিটার। বন্দিত্বকালীন অধ্যয়ন অন্যান্য অনেক আধুনিক স্কলারের মতো ইবনে হাইসামেরও আলোকবিজ্ঞানের বিখ্যাত কাজগুলোসহ অন্যান্য কাজ নিয়ে লেখালেখি করার জন্য প্রচুর সময় ও একাকিত্বের প্রয়োজন ছিল।

তিনি এরকম একটি অনাকাক্সিক্ষত সুযোগও পেয়ে যান। ১০১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১০২১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তাকে মিসরে বন্দী করে রাখা হয়। কেননা কায়রোর এক খলিফা তাকে শরৎকালে নীল নদের বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি বিশেষ কাজ দিয়েছিলেন এবং তিনি তা করতে ব্যর্থ হন। ইবনে হাইসাম যখন বসরায় ছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন খাল খনন এবং বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে শরৎকালে নীল নদের পানি গ্রীষ্ম না আসা পর্যন্ত সংরক্ষণ করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

 কিন্তু তিনি যখন কায়রো পৌঁছলেন তখন দেখলেন তার পরিকল্পনা প্রকৌশল বিদ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে মোটেও প্রয়োগযোগ্য নয়। তিনি নির্মম খলিফার হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য নিজের ভুল স্বীকার না করে পাগল হয়ে যাওয়ার ভান করলেন যাতে তার শাস্তি মওকুফ হয়। এই জন্য তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয় এবং তিনি ১০ বছর একাকী কাজ করার সুযোগ পেয়ে গেলেন। গ্রহের গতি খলিফার মৃত্যুর পরই তিনি ছাড়া পেয়েছিলেন। এরপর তিনি ইরাকে ফিরে যান এবং সেখানে তিনি পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নতুন আরো ১০০টি কাজ করেন।

আমার ফিল্ম তৈরির সময় যখন আমি মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণ করেছিলাম, তখন আমি আলেকজান্দ্রিয়ায় একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেই, যিনি ইবনে হাইসামের জ্যোতির্বিজ্ঞানের ওপর সম্প্রতি কিছু আবিষ্কৃত কাজ আমাকে দেখিয়েছিলেন। এটা দেখে মনে হয়েছিল উনি মহাকাশীয় বলবিদ্যা তথা গ্রহগুলোর কক্ষপথ ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রেও উন্নয়ন সাধন করেছিলেন। তার কাজগুলোই কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও, কেপলার এবং নিউটনের মত ইউরোপিয়ানদের কাজের পথ দেখিয়েছিল। আরো ১০০০ বছর পূর্বের একজন পদার্থবিজ্ঞানীর কাছে বর্তমান যুগের পদার্থবিজ্ঞানীরা ঋণী। আর এ সত্য আমরা এখন জানতে পারছি এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য। অনুবাদক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ব্যক্তিগত জীবন

খালিলি তার স্ত্রী জুলির সাথে পোর্টসমাথের সাউথসিতে থাকেন। তাদের একজন ছেলে ও একজন মেয়ে রয়েছে। খালিলি নিজেকে একজন নাস্তিক  মানবতাবাদী হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং মন্তব্য করেছেন, "একজন প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিষ্টান মা ও একজন শিয়া মুসলিম পিতার সন্তান হয়েও আমি আমার শরীরে ধর্মীয় হাড় ছাড়াই শেষ হয়ে গেছি"। খালিলি ২০১৬ সালে যুক্তরাজ্য মানবতাবাদীর সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করে সহ-সভাপতি হন। এছাড়াও তিনি গিল্ডফোর্ডভিত্তিক শিক্ষাগত, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সম্প্রদায়ের কেন্দ্র গিল্ডফোর্ড ইনস্টিটিউটের একজন পৃষ্ঠপোষক।

মৃত্যু:

১১ মার্চ ১৯৫৫ (বয়স ৭৩)   লন্ডন, ইংল্যান্ড এ শেষ নিশ্বাঃস ত্যাগ করেন।

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0