টম ক্রুজ এর জীবনী | Biography of Tom Cruise
টম ক্রুজ এর জীবনী | Biography of Tom Cruise

পুরো নাম: |
টমাস ক্রুজ ম্যাপোথার চতুর্থ |
ব্যক্তিগত জীবন: |
রিস্কি বিজনেস চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সময় সহ-তারকা রেবেকা ডি মোর্নের সাথে টম ক্রুজের সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায়। নিউইয়র্কে তারা ১৯৮৩-১৯৮৫ সাল পর্যন্ত একত্রে বসবাস করতেন। |
অভিনয়: |
১৯৮১ সালে ক্রুজ এন্ডলেস লাভ এবং ট্যাপস চলচ্চিত্রে সহকারী চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জীবন শুরু করেন। |
পুরস্কার ও সম্মাননা:
|
পুরস্কার বার গোল্ডেন গ্লোব ৩ বার অস্কার মনোনয়ন ৩ বার MTV Movie Awards ৭ বার People's Choice Awards বহুবার BAFTA মনোনয়ন ১ বার |
পরিচিতি:
পুরো নাম: টমাস ক্রুজ ম্যাপোথার চতুর্থ
ডাকনাম: টম ক্রুজ
জন্ম: ৩ জুলাই, ১৯৬২
জন্মস্থান: সিরাকিউজ, নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
জাতীয়তা: মার্কিন
পেশা: অভিনেতা, প্রযোজক
সক্রিয়: বছর ১৯৮১–বর্তমান
উচ্চতা: প্রায় ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি
ধর্ম: সায়েন্টোলজি
সম্পদ: প্রায় $৬০০ মিলিয়ন (২০২৪ অনুযায়ী)
ব্যক্তিগত জীবন:
রিস্কি বিজনেস চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সময় সহ-তারকা রেবেকা ডি মোর্নের সাথে টম ক্রুজের সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায়। নিউইয়র্কে তারা ১৯৮৩-১৯৮৫ সাল পর্যন্ত একত্রে বসবাস করতেন।
৯ মে, ১৯৮৭ সালে চলচ্চিত্র অভিনেত্রী মিমি রজার্সকে বিয়ে করেন তিনি। পরবর্তীতে ৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯০ সালে তাদের মধ্যে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। ডেজ অব থান্ডার চলচ্চিত্রের সেটে ক্রুজের সাথে নিকোল কিডম্যানের প্রথম দেখা হয়। তারা ১৯৯০ সালের ২৪ ডিসেম্বর বিয়ে করেন। এ সংসারে ইসাবেলা জেন (জন্মঃ ডিসেম্বর, ১৯৯২) এবং কনর এন্টনী (জন্মঃ জানুয়ারি, ১৯৯৫) নামের দুই সন্তান রয়েছে।২০০১ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ভ্যানিলা স্কাই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সময় অভিনেত্রী পেনেলোপি ক্রুজের সাথে প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ হন। তিন বছরের সম্পর্কটি ২০০৪ সালে ভেঙ্গে যায়।
পরবর্তীতে ১৮ই নভেম্বর, ২০০৬ তিনি অভিনেত্রী কেটি হোমসকে বিয়ে করেন।২০১২ সালে হোমস বিবাহবিচ্ছেদের জন্য আবেদন করেন। একই বছর তাদের উকিলের মাধ্যমে বিচ্ছেদটি চুড়ান্ত হয়।
প্রারম্ভিক জীবন:
টম ক্রুজ একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন একজন বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী এবং মা ছিলেন শিক্ষিকা। শৈশবে তিনি একাধিক স্কুলে পড়াশোনা করেন কারণ তার পরিবার প্রায়ই স্থান পরিবর্তন করত।
তিনি ছোটবেলায় ডিসলেক্সিয়া নামক সমস্যায় ভুগতেন, যার ফলে পড়ালেখায় সমস্যায় পড়তেন। তবুও তার মায়ের উৎসাহে তিনি থিয়েটার এবং অভিনয়ের দিকে আগ্রহী হন।
টম ক্রুজের পূর্বপুরুষগণ ছিলেন - জার্মান, আইরিশ এবং ইংরেজ গোত্রের।দারিদ্র্যের মধ্যে ক্যাথলিক পরিবারে রাগী ও কটুভাষী পিতার কঠোর অনুশাসনে তিনি বড় হন। এর ফলে তিনি পিতাকে অভিহিত করেন একজন বিশৃঙ্খল ব্যবসায়ী হিসেবে।
ক্যারিয়ার:
১৯৮১ সালে ক্রুজ এন্ডলেস লাভ এবং ট্যাপস চলচ্চিত্রে সহকারী চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জীবন শুরু করেন। এরপর তিনি একটি সামরিক বিদ্যালয়ের মাথা পাগল ছাত্রের চরিত্রেও অভিনয় করেছিলেন।
১৯৮৩ সালে লসইন' ইট শীর্ষক কমেডি ধাঁচের চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন। ঐ একই বছরে অল দ্য রাইট মুভস এবং রিস্কি বিজনেস চলচ্চিত্রের মাধ্যমে টম ক্রুজের বর্ণাঢ্য অভিনয় জীবনে সাফল্য গাঁথা শুরু হয়। এরপর ১৯৮৬ সালের টপ গান চলচ্চিত্র তাকে পুরোপুরি তারকা খ্যাতির মর্যাদা এনে দেয়।
এরপর দ্য কালার অব মানি ঐ বছরই মুক্তি পায়। অসাধারণ অভিনয়শৈলীর জন্য তিনি পল নিউম্যানের সাথে যৌথভাবে একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৮ সালে তাকে ককটেল ছবিতে অভিনয়ের জন্য র্যাজি এ্যাওয়ার্ড ফর ওর্স অ্যাক্টর হিসেবে মনোনীত করে।
১৯৮০-এর দশক: সাফল্য এবং তারকাখ্যাতি:
১৮ বছর বয়সে, তার মা এবং সৎ বাবার আশীর্বাদে, ক্রুজ অভিনয় ক্যারিয়ার গড়ার জন্য নিউ ইয়র্ক সিটিতে চলে আসেন। নিউ ইয়র্কে একজন বাসবয় হিসেবে কাজ করার পর , তিনি টেলিভিশন চরিত্রে অভিনয়ের জন্য লস অ্যাঞ্জেলেসে যান। তিনি CAA-এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হন এবং চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন।
তিনি ১৯৮১ সালের এন্ডলেস লাভ চলচ্চিত্রে একটি ছোট ভূমিকায় অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন , তারপরে সেই বছরের শেষের দিকে ট্যাপস চলচ্চিত্রে একজন উন্মাদ সামরিক একাডেমির ছাত্র হিসেবে একটি প্রধান পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন। ক্রুজ মূলত একজন পটভূমি অভিনেতা হিসেবে অভিনয় করার কথা ছিল কিন্তু পরিচালক হ্যারল্ড বেকারকে মুগ্ধ করার পর তার ভূমিকা আরও বিস্তৃত করা হয় ।
১৯৮৩ সালে, ক্রুজ ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলার দ্য আউটসাইডার্স চলচ্চিত্রের অংশ ছিলেন । একই বছর তিনি অল দ্য রাইট মুভস এবং রিস্কি বিজনেস চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, যা "এ জেনারেশন এক্স ক্লাসিক এবং টম ক্রুজের ক্যারিয়ার নির্মাতা" হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে ।
তিনি ১৯৮৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত রিডলি স্কটের লেজেন্ড চলচ্চিত্রে পুরুষ প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন । ১৯৮৬ সালের টপ গানের মাধ্যমে, একজন সুপারস্টার হিসেবে তার অবস্থান দৃঢ় হয়ে ওঠে।
ক্রুজ মার্টিন স্করসেসির দ্য কালার অফ মানি (১৯৮৬) সিনেমার মাধ্যমে টপ গানের পর অভিনয় করেন , যা একই বছর প্রকাশিত হয় এবং পল নিউম্যানের সাথে জুটি বেঁধেছিল । তাদের রসায়ন সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছিল।
ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছিল, "ক্রুজ এবং নিউম্যানের অভিনয়ের একটি সূক্ষ্ম সাফল্য হল আপনি অনুভব করেন যে তারা দুজনেই সত্যিকার অর্থে শীর্ষস্থানীয় পুল হাস্টলার"। ১৯৮৮ সালে, ক্রুজ ককটেল সিনেমায় অভিনয় করেন, যেটি বক্স অফিসে সাফল্য পেয়েছিল কিন্তু সমালোচকদের কাছে ব্যর্থ হয়েছিল।
তার অভিনয় তাকে সবচেয়ে খারাপ অভিনেতার জন্য রেজি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন এনে দেয় । সেই বছরের শেষের দিকে তিনি ব্যারি লেভিনসনের রেইন ম্যান সিনেমায় ডাস্টিন হফম্যানের সাথে অভিনয় করেন, যা সেরা ছবির জন্য একাডেমি পুরস্কার জিতে নেয় ।
প্রযোজনা:
প্রযোজক হিসেবেও ভালো মুন্সিয়ানার পরিচয় রেখেছেন টম ক্রুজ। মিশন ইম্পসিবল সিরিজটি ছবিটি তারই উদাহরণ। ২০০৫ সালে হলিউড সাংবাদিক এডওয়ার্ড জে এপস্টিন দাবি করেন, খুব কমসংখ্যক প্রযোজক আছেন, যিনি টম ক্রুজের মতো বিলিয়ন-ডলার চুক্তির চলচ্চিত্রে সাফল্যের নিশ্চয়তা দিতে পারেন। ক্রুজ/ওয়াগনার প্রডাকশনস ক্রুজ ও তার অংশীদার ওয়াগনারের ফিল্ম প্রোডাকশন কোম্পানি।
সায়েন্টোলজি:
চার্চ অব সায়েন্টোলজির প্রতি টম ক্রুজের এক ধরনের অন্ধ বিশ্বাস ছিল। ক্রুজ ‘সায়েন্টোলজিকে’ ইউরোপে ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচার চালিয়ে এই বিতর্কের জন্ম দেন। প্রথম স্ত্রী মিমি মিমি রজার্সের মাধ্যমেই ক্রুজ সায়েন্টোলজির সাথে জড়িত হন।
অনেকেই মনে করেন সায়েন্টোলজি তার ক্যারিয়ারে খুব নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আবার সায়েন্টোলজি ধর্মে বিশ্বাস করার জন্যও সর্বাধিক পরিচিত তিনি।
টম ক্রুজ হলেন Church of Scientology-এর সবচেয়ে বিখ্যাত অনুসারী।
সায়েন্টোলজি ধর্ম নিয়ে তার অনেক বিতর্কও রয়েছে।
জনপ্রিয়তা:
পিপল ম্যাগাজিন পত্রিকায় তিনি বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ব্যক্তির মর্যাদা লাভ করেন। ১৯৯০, ১৯৯১ এবং ১৯৯৭ সালে তিনি ৫০ জন ব্যক্তির একজন হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৯৫ সালে এম্পায়ার ম্যাগাজিন তাকে চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ১০০ জন আবেদনময় পুরুষ তারকা হিসেবে তাদের তালিকায় স্থান দেয়।
এর দু'বছর পর পত্রিকাটি সর্বকালের সেরা পাঁচ জনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। ২০০২ এবং ২০০৩ সালে তিনি প্রিমিয়ার ম্যাগাজিন কর্তৃক বার্ষিক আকারে প্রকাশিত পাওয়ার হান্ড্রেড তালিকায় শীর্ষ ২০-এ স্থান পান।
২০০৬ সালে প্রিমিয়ার ম্যাগাজিন টম ক্রুজকে হলিউডের সবচেয়ে ক্ষমতাধর অভিনেতা হিসেবে মনোনীত করে; এতে তিনি ম্যাগাজিনের পাওয়ার হান্ড্রেড তালিকায় ত্রয়োদশ স্থান দখল করেন। একই বছর ফোর্বস সাময়িকী তাকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর চিত্রতারকার আসনে অভিষিক্ত করে।
টম ক্রুজ ডে:
১০ অক্টোবর, ২০০৬ সালে জাপানে টম ক্রুজ ডে হিসেবে পালন করা হয়। জাপান মেমোরিয়াল ডে এসোসিয়েশন বিশেষ দিবস হিসেবে তার এ অর্জনের জন্য বলেছে যে, টম ক্রুজ অন্য যে কোন হলিউড তারকার তুলনায় তিনি জাপানে অধিকবার ভ্রমণ করেন।
বিশ্বজয়:
১৯৮৬ সালে Top Gun মুক্তি পায় এবং এটি বিশ্বব্যাপী সুপারহিট হয়। টম ক্রুজের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী হয়।
এরপর তিনি Rain Man (১৯৮৮), Born on the Fourth of July (১৯৮৯), A Few Good Men (১৯৯২), The Firm (১৯৯৩), Jerry Maguire (১৯৯৬), The Last Samurai (২০০৩) সহ অনেক প্রশংসিত সিনেমায় অভিনয় করেন।
Mission: Impossible সিরিজ:
১৯৯৬ সালে Mission: Impossible মুক্তি পায়, এবং এটি থেকে একটি জনপ্রিয় সিরিজ গড়ে ওঠে।
টম ক্রুজ এই সিরিজের প্রযোজক এবং মুখ্য চরিত্র ইথান হান্টের ভূমিকায় অভিনয় করেন।
এখন পর্যন্ত সিরিজটির ৭টি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে।
ব্যক্তিগত জীবন:
বিয়ে ও সম্পর্ক:
মিমি রজার্স (বিয়ে: ১৯৮৭ - বিচ্ছেদ: ১৯৯০)
নিকোল কিডম্যান (বিয়ে: ১৯৯০ - বিচ্ছেদ: ২০০১)
কেটি হোমস (বিয়ে: ২০০৬ - বিচ্ছেদ: ২০১২)
সন্তান: ২টি (দত্তক)
সন্তান: সুরি ক্রুজ (জন্ম: ২০০৬)
পুরস্কার ও সম্মাননা:
পুরস্কার বার
গোল্ডেন গ্লোব ৩ বার
অস্কার মনোনয়ন ৩ বার
MTV Movie Awards ৭ বার
People's Choice Awards বহুবার
BAFTA মনোনয়ন ১ বার
জনপ্রিয় সিনেমার তালিকা:
বছর সিনেমা
1983 Risky Business
1986 Top Gun
1988 Rain Man
1989 Born on the Fourth of July
1992 A Few Good Men
1996 Mission: Impossible
1996 Jerry Maguire
2003 The Last Samurai
2005 War of the Worlds
2010 Knight and Day
2014 Edge of Tomorrow
2018 Mission: Impossible – Fallout
2022 Top Gun: Maverick
2023 Mission: Impossible – Dead Reckoning Part One
কিছু অজানা তথ্য:
টম ক্রুজ নিজেই তার বেশিরভাগ স্টান্ট করে থাকেন। তিনি বিমান, হেলিকপ্টার চালানো এবং ভবন বেয়ে ওঠার মত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ নিজে করেন।
তিনি একবার একটি সিনেমার জন্য প্লেন থেকে ৫০০ বারেরও বেশি স্কাইডাইভ করেছিলেন।
তিনি কেবল অভিনয়েই নয়, প্রযোজনাতেও সফল।
টম ক্রুজ ছিল এক সময়ের বিশ্বের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতা।
What's Your Reaction?






