কিয়ানু রিভস এর জীবনী | Biography Of Keanu Reeves

কিয়ানু রিভস এর জীবনী | Biography Of Keanu Reeves

May 24, 2025 - 22:01
Jun 20, 2025 - 11:28
 0  1
কিয়ানু রিভস এর জীবনী | Biography Of  Keanu Reeves

জন্ম

২ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৪ (বয়স ৬০) বৈরুত , লেবানন

নাগরিকত্ব

কানাডা

পেশা

অভিনেতা সঙ্গীতজ্ঞ

সক্রিয় বছর

১৯৮৪–বর্তমান

জন্ম
২ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৪ (বয়স ৬০) বৈরুত , লেবানন
নাগরিকত্ব
কানাডা
পেশা
অভিনেতা সঙ্গীতজ্ঞ
সক্রিয় বছর
১৯৮৪–বর্তমান

জীবনী

কেয়ানু চার্লস রিভস, যার প্রথম নামটির অর্থ হাওয়াইয়ানের "পর্বতমালার উপরে শীতল বাতাস", জন্মগ্রহণ করেছিলেন ২ সেপ্টেম্বর, ১৯6464 লেবাননের বৈরুত শহরে। তিনি প্যাট্রিক রিভসের পুত্র, একজন শোগার্ল এবং পোশাক ডিজাইনার এবং ভূতাত্ত্বিক স্যামুয়েল নওলিন রিভস। কেয়ানের বাবা হাওয়াইতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, নেটিভ হাওয়াইয়ান এবং চীনা বংশধরদের এবং কেয়ানির মা মূলত এসেক্স ইংল্যান্ডের বাসিন্দা। তার বাবা -মা'র বিবাহ দ্রবীভূত হওয়ার পরে, কেয়ানু তার মা এবং ছোট বোন কিম রিভসের সাথে নিউ ইয়র্ক সিটিতে, তৎকালীন টরন্টোর সাথে চলে এসেছিল। স্টেপফাদার #1 হলেন পল অ্যারন, একজন মঞ্চ এবং চলচ্চিত্র পরিচালক - তিনি এবং প্যাট্রিসিয়া এক বছরের মধ্যে তালাকপ্রাপ্ত হয়েছিলেন, তারপরে তিনি রক প্রচারক রবার্ট মিলারকে (এবং বিবাহবিচ্ছেদ) বিয়ে করতে গিয়েছিলেন। রিভস কখনই তাঁর জৈবিক বাবার সাথে সংযোগ স্থাপন করেনি। হাই স্কুলে, রিভস শিক্ষাবিদদের দিকে হালকা ছিল তবে আইস হকি (টিম গোলরক্ষক হিসাবে, তিনি "দ্য ওয়াল" ডাকনাম অর্জন করেছিলেন) এবং নাটকটি নিয়ে গভীর আগ্রহী ছিলেন। অবশেষে তিনি অভিনয় ক্যারিয়ার অনুসরণ করতে স্কুল ছাড়েন।

কয়েকটি স্টেজ জিগ এবং টিভি-টিভি-র মুঠো মুভিগুলির পরে, তিনি রব লো হকি ফ্লিক ইয়ংব্লুড (1986) এ একটি সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন, যা কানাডায় চিত্রায়িত হয়েছিল। প্রযোজনাটি গুটিয়ে যাওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই রিভস তার ব্যাগগুলি প্যাক করে হলিউডের দিকে রওনা হয়েছিল। রিভস ডার্ক কিশোর নাটক, রিভার এজ (1986) -এর অভিনয় দিয়ে সমালোচকদের রাডারে উঠে এসেছিলেন এবং পরিচালক স্টিফেন ফ্রেয়ার্সের সাথে অস্কার-মনোনীত বিপজ্জনক লিয়াজনস (1988) এ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন।

তাঁর প্রথম জনপ্রিয় সাফল্য ছিল বিল অ্যান্ড টেডের দুর্দান্ত অ্যাডভেঞ্চারে (1989) সম্পূর্ণ র‌্যাড ডুড টেড "থিওডোর" লোগান। অদ্ভুত সময়-ভ্রমণ মুভিটি একটি সাংস্কৃতিক ঘটনার কিছু হয়ে ওঠে এবং শ্রোতারা চিরতরে রিভসের বাস্তব জীবনের ব্যক্তিত্বকে তার ডুফি অন-স্ক্রিন সমকক্ষের সাথে বিভ্রান্ত করে। তারপরে তিনি রন হাওয়ার্ডের কমেডি, প্যারেন্টহুড (1989) এবং লরেন্স কাসদানের আই লাভ ইউ টু ডেথ (1990) এর ক্যাস্টসে যোগ দিয়েছিলেন।

পরের কয়েক বছর ধরে, রিভস একাধিক হাইব্রো প্রকল্পের সাথে টেড কলঙ্ককে কাঁপানোর চেষ্টা করেছিল। তিনি আমার নিজের প্রাইভেট আইডাহোতে (১৯৯১) রিভার ফিনিক্সের নারকোলেপটিক পুরুষ হস্টলারের বিপরীতে একটি স্ল্যামিং ধনী ছেলে চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, তিনি একজন দুর্ভাগ্য আইনজীবী যিনি ড্রাকুলায় ভ্যাম্পায়ারের লায়ারে হোঁচট খাচ্ছেন (1992), এবং শেক্সপিয়ার পার্টি-পোপার ডোন জন জনকে মোরস অডো অডো (1993) এ ডোন জন জনকে।

1994 সালে, 

সংক্ষিপ্ত অভিনেতা স্পিড (1994) প্রকাশের সাথে একটি বড় বাজেটের অ্যাকশন তারকা হয়ে ওঠেন। এর সাফল্যটি পাঁচ বছরের যুগের যুগে যুগে যুগে যুগে যুগে যুগে যুগে যুগে ছোট ছোট চলচ্চিত্রের মধ্যে বিকল্প ছিল, যেমন অনুভূতি মিনেসোটা (১৯৯ 1996) এবং শেষবারের মতো আমি আত্মহত্যা করেছি (১৯৯)), এবং বিগ ফিল্মস ল এর ইন দ্য ওয়াক ইন দ্য ক্লাউডস (১৯৯৫) এবং দ্য ডেভিলস অ্যাডভোকেট (১৯৯))। (একটি দম্পতি মিসফায়ারও ছিল: জনি মেমোনিক (1995) এবং চেইন রিঅ্যাকশন (1996)।) এত কিছুর পরেও রিভস কল্পনাশক্তিটি করেছিলেন এবং গতির সিক্যুয়েলটি পেরিয়েছিলেন, তবে তিনি কয়েক বছর পরে ওয়াচোস্কি ভাইবোনদের সাইবারডভেঞ্চার, দ্য ম্যাট্রিক্স (1999) এর সাথে আবার বক্স-অফিসে গোল্ডকে আঘাত করেছিলেন।

এখন একটি বোনফাইড বক্স -অফিস তারকা, কেয়ানু একটি ছোট ছোট ছবিতে উপস্থিত হবে - তাদের মধ্যে দ্য রেপ্লেসমেন্টস (2000), দ্য ওয়াচার (2000), দ্য গিফট (2000), মিষ্টি নভেম্বর (2001), এবং হার্ডবল (2001) - ম্যাট্রিক্স পুনরায় লোডড (2003) এবং 2003 সালে ম্যাট্রিক্স রেভোলিউশনস (2003) এর আগে প্রকাশিত হয়েছিল।

ম্যাট্রিক্স ট্রিলজির সমাপ্তির পর থেকে, কেয়ানু তার সময়কে মূলধারার এবং ইন্ডি ভাড়ার মধ্যে বিভক্ত করেছে, কিছু গোটার গিভ (2003), দ্য লেক হাউস (2006) এবং স্ট্রিট কিংস (২০০৮) এর সাথে হিট অবতরণ করেছে। তিনি ম্যাট্রিক্স ভক্তদের কনস্টান্টাইন (2005), একটি স্ক্যানার ডার্কলি (2006) এবং দ্য দ্য দ্য দ্য আর্থ স্টুড স্টিড স্টিল (২০০৮) এর মতো চলচ্চিত্রের সাথে তৃপ্ত করেছেন। এবং তিনি এলি পার্কার (২০০৫), থাম্বসকার (২০০৫), দ্য প্রাইভেট লাইভস অফ পিপ্পা লি (২০০৯) এবং হেনরির অপরাধ (২০১০) এর সাথে আর্ট-হাউস অঞ্চলে ফিরে এসেছেন।

অতি সম্প্রতি, সামুরাই এপিক 47 রোনিন (২০১৩) এর পোস্ট-প্রোডাকশন যেমন চালু হয়েছিল, কেয়ানু পাশাপাশি (২০১২) ক্যামেরার সামনে উপস্থিত হয়েছিল, সেলুলয়েড এবং ডিজিটাল ফিল্মমেকিংয়ের একটি ডকুমেন্টারি, যা তিনিও প্রযোজনা করেছিলেন। তিনি আরেক এশিয়ান-প্রভাবিত প্রকল্প, ম্যান অফ তাই চি (২০১৩) পরিচালনা করেছিলেন।

২০১৪ সালে, কেয়ানু অ্যাকশন রিভেঞ্জ ফিল্ম জন উইক (২০১৪) এ শিরোনামের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, যা সমালোচক এবং শ্রোতাদের কাছে একইভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তিনি জন উইকে: অধ্যায় 2 (2017) -এর ভূমিকাকে পুনর্বিবেচনা করেছিলেন, এখনকার আইকনিক চরিত্রটিকে আরও ভাল উদ্বোধনী উইকএন্ডে এবং আরও উত্সাহী পর্যালোচনাগুলিতে প্রথম গো-এর চেয়ে বেশি উত্সাহী পর্যালোচনা করেছেন।


পরিবার

বাচ্চারা
কোন বাচ্চা নেই
বাবা -মা
স্যামুয়েল নওলিন রিভস
প্যাট্রিক রিভস
আত্মীয়
কিম রিভস (ভাইবোন)
কারিনা মিলার (অর্ধ ভাইবোন)
এমা রিভস (অর্ধ ভাইবোন)
ট্রেডমার্ক
তীব্র মননশীল দৃষ্টিতে
গভীর কুঁচকির কণ্ঠস্বর
স্টোইক সংরক্ষিত চরিত্রগুলি খেলার জন্য পরিচিত
বন্ধুত্বপূর্ণ, ডাউন-টু-আর্থ ব্যক্তিত্ব
প্রায়শই লরেন্স ফিশবার্নের সাথে কাজ করে

পৃথিবীর–আকাশের পুরানো কে আত্মার মতন,

জেগে আছি; –বাতাসের সাথে সাথে আমি চলি ভেসে,

পাহাড়ে হাওয়ার মতো ফিরিতেছে একা একা মন,

সিন্ধুর ঢেউয়ের মতো দুপুরের সমুদ্রের শেষে 

চলিতেছে; –কোন এক দূর দেশে –কোন নিরুদ্দেশে

জন্ম তার হয়েছিল, -সেইখানে উঠেছে সে বেড়ে

কোনো এক দূর নিরুদ্দেশে জন্মেছিলেন তিনি। অলস ক্লান্ত দুপুরেও বয়ে গেছেন সিন্ধু ঢেউয়ের মতন। আর গোধূলি বেলায় পাহাড়ি হাওয়ার মতো একাকীত্বকে সঙ্গী করে ঘরে ফিরেছেন বারবার।

কথা বলবার সময় মুখ থেকে হাসি যেন তার মুছতেই চায় না। নম্রতা, ভদ্রতা আর সৌজন্যবোধ দিয়ে যেকোনো মানুষকে মুগ্ধ করতে পারেন তিনি। খ্যাতি, প্রাপ্তি, মর্যাদা ও সাফল্য, কোনো কিছুরই কমতি নেই তার। মিডিয়াও যেন তাকে নিয়ে কথা বলতে ভালোবাসে। 

কখনো মিলিয়ে যাননি লোকচক্ষুর অন্তরালে। ইন্টারভিউগুলোতে অংশ নিচ্ছেন, করছেন নিত্যনতুন ব্লকবাস্টারের প্রমোশন, হাজির হচ্ছেন টক শো আর রেড কার্পেটগুলোতেও। তবুও তিনি কোনো না কোনোভাবে মিডিয়ার সামনে নিজের ব্যক্তিগতজীবন এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে গেছেন সবসময়ই।


রেড কার্পেটে কিয়ানু রিভস 

হাওয়াইয়ান ভাষায় কিয়ানু শব্দটির অর্থ পাহাড়ি শীতল হাওয়া। আর জীবনানন্দ দাশ রচিত অনেক আকাশ কবিতার চরণগুলোর মতোই অদ্ভুত এক জীবন পাড়ি দিয়ে চলেছেন কিয়ানু রিভস।

উত্থান-পতন, সে তো প্রতিটি মানুষের জীবনেই থাকে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। কিন্তু বিশ্বখ্যাত হলিউড তারকা কিয়ানু রিভসের জীবনের গল্পটা হয়তো হার মানাবে বহু সিনেমার গল্পকেও। তার জীবনের পটভূমিতে অন্ধকার ঘনিয়ে কালো মেঘের আনাগোনা যখন শুরু হয়েছিল, তখন তার বয়স মাত্র তিন বছর।

শৈশবেই বাবাকে হারান তিনি!
পেশায় ভূবিজ্ঞানী স্যামুয়েল নওলিন রিভস-এর জন্মটা হয়েছিল হাওয়াইতে। ওদিকে শো-গার্ল ও কস্টিউম ডিজাইনার হিসেবে লেবাননের শোবিজ অঙ্গনে কাজ করা প্যাট্রিসিয়া টেলরের পূর্বপুরুষেরা ছিলেন পুরোপুরি ব্রিটিশ।

প্রণয়কে পরিণয়ে রূপ দিয়ে এ যুগল ঘর বাঁধলেন লেবাননের বৈরুতে। ১৯৬৪ সালে স্যামুয়েল আর প্যাট্রিসিয়ার কোল আলো করে এলো এক পুত্রসন্তান। শখ করে স্যামুয়েল সে সন্তানের নাম রাখলেন কিয়ানু চার্লস রিভস।

বাবা স্যামুয়েলের মাত্রাতিরিক্ত মাদকাসক্তি ও জুয়ায় মনোনিবেশের কারণে ভাঙন ধরলো সংসারে। আর তাই প্যাট্রিসিয়ার সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে পরিবার ত্যাগ করে যখন তিনি হাওয়াইতে ফিরে গেলেন, কিয়ানু তখন তিন বছরের ছোট্ট শিশু।


লেবাননে জন্মেছিলেন কিয়ানু

জীবিকার টানে সন্তানকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে পাড়ি জমালেন প্যাট্রিসিয়া। সেখানেই জন্ম নিলো কিয়ানুর সৎ বোন কিম। মাস কয়েক বাদেই সিডনি ছেড়ে তিনজনে চলে এলেন নিউ ইয়র্কে।

সেখানে পল অ্যারন নামের এক মঞ্চ ও চলচ্চিত্র পরিচালকের সাথে পরিচয় হয় প্যাট্রিসিয়ার। একটা পর্যায়ে তাদের ঘনিষ্ঠতা বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়। বিয়ের পর প্যাট্রিসিয়া তার সন্তানদের নিয়ে পলের সাথে টরন্টোতে চলে যান এবং কানাডার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন।


জীবনযুদ্ধটা শিখেছেন তিনি মায়ের কাছেই
কিন্তু মাত্র এক বছরের মাথায় এ দম্পতি বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। ১৯৭৬ সালে তৃতীয়বারের মতো রবার্ট মিলারকে বিয়ে করেন প্যাট্রিসিয়া। সেই ঘরে জন্ম নেয় কিয়ানুর দ্বিতীয় সৎবোন কারিনা।
আর তারপর রবার্ট মিলারের সাথেও বৈবাহিক সম্পর্কের ইতি টেনে, ১৯৯৪ সালে চতুর্থবারের মতো জ্যাক বন্ডকে বিয়ে করেন প্যাট্রিসিয়া।

১৩ বছর বয়স পর্যন্ত নিজ বাবা স্যামুয়েলের সাথে দেখা করতে হাওয়াই যেতেন কিয়ানু। তারপর শহর থেকে শহরে ছুটোছুটি করতে করতে, পরবর্তী জীবনে বাবার সাথে তার আর কোনো যোগাযোগ ছিল না।

হাইস্কুল ড্রপআউট

পারিবারিক অস্থিতিশীলতা আর ভৌগোলিক অবস্থানের এমন বিক্ষিপ্ত পরিবর্তনের কারণে, কিয়ানু রিভস আর তার বোনদের শৈশবের অধিকাংশ সময়টুকুই কেটেছে বেবি সিটার আর দাদা-দাদীদের কাছে। এমনকি পরপর পাঁচ বছরে চারটি ভিন্ন ভিন্ন স্কুলে যাবার অভিজ্ঞতাও হয়েছে কিয়ানুর।

শৈশবের সে দিনগুলোর স্মরণে কিয়ানু বলেন,

আমাদের শৈশবটাই কেটেছে এভাবে। মূলত আমরা সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতাম, ফিরতাম একদম রাতে। মজার ছিল দিনগুলো।

নিয়মিত স্কুলে যেতেন তিনি। অবশ্য লেখাপড়ার চেয়ে থিয়েটারে অভিনয় আর আইস হকির প্রতিই আগ্রহটা বেশি ছিল তার। স্কুলের আইস হকি দলের রক্ষণভাগে বিশেষ দক্ষতার কারণে তার নাম ছিল ‘দ্য ওয়াল’। অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ থেকে কানাডার ইটোবিকোক স্কুল অফ দ্য আর্টস-এ অডিশনও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেখানে পড়ার সুযোগ পাননি।


শৈশবের দিনগুলোতে কিয়ানু

বছর বছর স্কুল পাল্টানো সত্ত্বেও তার আগ্রহে কখনো ভাটা পড়েনি। লেখাপড়ায় অত ভালো না হলেও, স্কুলে যেতে ভালোবাসতেন ছোট্ট কিয়ানু। কিন্তু বিরূপ ভাগ্যের নির্মম শিকার হয়ে তার ধরা পড়লো ডিসলেক্সিয়া।

লেখাপড়া করাই কঠিন হয়ে দাঁড়ালো তার জন্য। যার ফলস্বরূপ গ্রাজুয়েশন শেষ করার বদলে, কিয়ানু রিভস হয়ে গেলেন একজন হাইস্কুল ড্রপআউট। অবশ্য পরবর্তী জীবনে বই পড়ার জন্য তিনি ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন শিক্ষা গ্রহণ করেন। অবসরে বই পড়া এখনও তার প্রিয় শখগুলোর মধ্যে অন্যতম।

জীবনকে ভুলে থাকতে খুঁজে নিয়েছেন নিত্য নতুন নেশা!
অদম্য মানসিকতার এ মানুষটির দৃঢ় মনোবলের দেয়ালে বারবার আছড়ে পড়েছে নিষ্ঠুর জীবনের নির্মমতার ঢেউ। ভাঙন ধরাতে চেয়েছে বারবার। কিন্তু তবুও স্রোতের বিপরীতে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন কিয়ানু। তবে, দিনশেষে তিনিও তো একজন মানুষ। মাঝে মধ্যে জীবন ছেড়ে পালাতে চাইতেন তিনিও।

আর এভাবেই নিত্যদিনকার জীবনের সব জটিলতা আর ঝঞ্ঝাট ভুলে থাকতে, কিয়ানু খুঁজে পেলেন এক নতুন নেশা। প্রতিদিন প্রিয় মোটরবাইকে করে বেরিয়ে যেতেন তিনি। ঘুরে বেড়াতেন সমুদ্র উপকূলে। যান্ত্রিকতার ছোঁয়ায় প্রকৃতির সান্নিধ্যে ঘুরে বেড়ানোর মাঝেই তিনি খুঁজে পেলেন সুখ। মোটরবাইক চালানোর প্রতি প্রচণ্ড ভালোবাসা ও ঝোঁক থেকে শিখে গেলেন বিভিন্ন স্টান্ট।


বাইকের প্রতি ভালোবাসার কোনো কমতি নেই তার
অবশ্য এসব করতে গিয়ে পাঁজরের হাড়-ভাঙার মতো মারাত্মক সব ইনজুরি ও সার্জারির সম্মুখীনও হতে হয়েছে তাকে। কিন্তু এতকিছুর পরও, মোটরবাইকের প্রতি ভালোবাসা বিন্দুমাত্র কমেনি তার। বরং ২০১১ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রতিষ্ঠা করেন আর্চ মোটরসাইকেল কোম্পানি। এছাড়াও, ব্যক্তিগতভাবে তার আছে বাইকের নিজস্ব কালেকশন। বাইক নিয়ে নিজের ভালোবাসা প্রকাশেও কোনো কার্পন্য করেননি কখনো-

আমি প্যাসিফিক কোস্ট হাইওয়ে ধরে বাইক চালাতে খুব ভালোবাসি। মাঝে মাঝে স্যান্টা মনিকা মাউন্টেনের ওদিকেও যাই। নিজেকে হারানো যায়, রোজকার চিন্তা ও দায়িত্ব ভুলে থাকা যায়, এমন যেকোনো কিছু করতেই পছন্দ করি আমি।

ক্যারিয়ারের সূচনা

স্কুল থিয়েটারে শেক্সপিয়ারের কিছু দৃশ্যে অভিনয় করে বেশ উপভোগ করেছিলেন তিনি। কাজ করার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা থাকায়, মাত্র ১৫ বছর বয়সেই আনুষ্ঠানিকভাবে তার অভিনয় ক্যারিয়ারের সূচনা হয়।অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ তার স্কুল জীবন থেকেই
১৯৭৯ সালে লেয়াহ পসলান্স থিয়েটারের মঞ্চে, শেক্সপিয়ারের বিখ্যাত রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট-এ অভিনয় করেন তিনি। তারপর সিবিসি টেলিভিশনের সিটকম ‘হ্যাঙ্গিং ইন’-এ কাজ করার মধ্য দিয়ে টেলিভিশনের পর্দায় অভিষেক হয় তার। তবে এসবের কোনোটাই ঠিক পরিকল্পনামাফিক হয়নি।

ছোটবেলায় কখনোই মুভি স্টার হবার স্বপ্ন দেখিনি আমি। আমি স্বপ্ন দেখেছি ফ্লাইং মেশিনে চড়ে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে ঘুরে বেড়াবার। যদিও আমি অভিনয় করতে ভালোবাসতাম। আর টিনএজে এসে বুঝতে পেরেছিলাম যে, জীবনে এটাকেই আঁকড়ে ধরে থাকতে চাই আমি। ১৬ বছর বয়স থেকে অভিনয়কে পেশা হিসেবে গ্রহণ করি আমি। আমার সৎবাবা ছিলেন একজন ডিরেক্টর আর মা ছিলেন কস্টিউম ডিজাইনার। কিন্তু আমি খেলাধুলা করতেই বেশি ভালোবাসতাম। একটা সময় তো খেলাধুলাতে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার চিন্তাও করেছিলাম।

বড় হবার মোটিভেশন পেতে কিয়ানুর শৈশবই যথেষ্ট ছিল। ছন্নছাড়া পারিবারিক জীবন ও বাবাকে ঠিকভাবে কাছে পাওয়ার অভাবই তার মধ্যে- নিজে কিছু হয়ে ওঠার তাড়না সৃষ্টি করেছিল।

 

শেখার চেষ্টা করে গেছেন প্রতিনিয়ত 

মাত্র ১৬ বছর বয়সে, প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা ড্রাইভ করে তিনি নিউইয়র্কে আসতেন শুধুমাত্র এইচবি স্টুডিওর অভিনয় ক্লাসে অংশ নিতে। ১৯৮০ সালে তিনি বিখ্যাত কার্বোনেটেড বেভারেজ কোম্পানি কোকাকোলার একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করার সুযোগ পান। এর পাশাপাশি বিভিন্ন শর্ট-ফিল্ম ও মঞ্চেও পারফর্ম করতে থাকেন। 

মঞ্চ আর টেলিভিশন শো-তে বেশ কিছু ছোটখাটো রোল করে, ১৯৮৬ সালে কানাডিয়ান সিনেমা ইয়ংব্লাড-এ পার্শ্বচরিত্রে কাজ করার সুযোগ পান তিনি। আর তারপরই ব্যাগ গুছিয়ে রওনা দেন হলিউডের উদ্দেশ্যে। 

মূলত রিভার’স এজ ও অস্কার মনোনীত সিনেমা ডেঞ্জারাস লায়াইসন্স-এ নিজের পারফর্মেন্স দিয়েই আলোচনায় উঠে আসেন তিনি। একই ধরনের আরও সিনেমায় কাজ করার অফার আসতে থাকলো তার কাছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল পার্মানেন্ট রেকর্ড। 


বিল অ্যান্ড টেড’স এক্সিলেন্ট অ্যাডভেঞ্চার সিনেমায় কিয়ানু

১৯৮৯ সালে মুক্তি পাওয়া ব্লকবাস্টার বিল অ্যান্ড টেড’স এক্সিলেন্ট অ্যাডভেঞ্চার-এ টেড লোগান চরিত্রে অভিনয় করে রাতারাতি তারকা বনে যান কিয়ানু। ঝড় তুললেন টিন ম্যাগাজিনগুলোয়। ১৯৯১ সালে মুক্তি পেল বিল অ্যান্ড টেড’স এক্সিলেন্ট অ্যাডভেঞ্চার এর সিক্যুয়েল। মিডিয়া তাকে রীতিমতো ‘আইডিয়ালিস্ট টিন’ হিসেবে আখ্যায়িত করতে লাগলো। উল্লেখ্য, ব্রিটেনের স্কাই ম্যাগাজিনে তাকে নিয়ে পুরো ১৫ পাতার বিশেষ ফিচার করা হয়েছিল।

হারালেন সবচেয়ে কাছের বন্ধুটিকে!
বেশ কয়েকবছর ‘হাইস্কুল টিন’ হিসেবে অভিনয় করার পর এই ধরাবাঁধা ‘টিন’ ইমেজ ছেড়ে বেরিয়ে আসতেই তিনি অভিনয় করলেন মাই ওউন প্রাইভেট আইডাহো সিনেমায়। এ সিনেমায় সহ-অভিনেতা হিসেবে ছিলেন রিভার ফিনিক্স। সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ানোর পাশাপাশি, কিয়ানুও সাফল্যের সাথে পেতে শুরু করলেন ভিন্ন ধারার বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করার প্রস্তাব।

তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৯২ সালে পয়েন্ট ব্রেক-এ অভিনয় করে তিনি ‘সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত পুরুষ’ হিসেবে জিতে নেন এমটিভি অ্যাওয়ার্ড। একের পর এক সিরিয়াস রোলে কাজ করে যাওয়া কিয়ানু তারপর অভিনয় করেন ব্রামস্টোকার’স ড্রাকুলা-তে।

হলিউডে কাজ করার সুবাদে ততদিনে নতুন নতুন বহু মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে তার। অনেক সাথে ঘনিষ্ঠতাও হয়েছে। তবে বন্ধু হিসেবে তার জীবনে আসা মানুষটার নাম রিভার ফিনিক্স। দুজন একসাথে প্রথম অভিনয় করেন ১৯৯০ সালে মুক্তি পাওয়া আই লাভ ইউ টু ডেথ সিনেমায়।

 মাই ওউন প্রাইভেট আইডাহো সিনেমার দৃশ্যে দুই বন্ধু

কিয়ানুর জীবনে সবচেয়ে কাছের মানুষগুলোর একজন ছিলেন রিভার ফিনিক্স। আর তাই তিনি যখন জানতে পারলেন, ওয়েস্ট হলিউডের দ্য ভাইপার রুম নাইট ক্লাবের সামনে সাইডওয়াকে মৃত্যুর মুখে পড়ে আছেন ফিনিক্স, ছুটে গেলেন সাথে সাথে। কিন্তু বাঁচাতে পারলেন না প্রিয় বন্ধুকে।

১৯৯৩ সালের ৩১শে অক্টোবর, মাত্র ২৩ বছর বয়সে ড্রাগ-ওভারডোজে মারা গেলেন উদীয়মান তারকা রিভার ফিনিক্স। বন্ধুর মৃত্যু প্রসঙ্গেও দেখা মিলেছে আবেগ প্রকাশে সংযত ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে সম্মান জানানো কিয়ানুর-

রিভারের সাথে যা হয়েছে, সেজন্য হলিউডকে দোষ দেয়া যাবে না। বর্তমানের দুনিয়ার সবখানেই বাচ্চারা মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। ব্যক্তিগত একটা সমস্যা ছিল ওর। কিন্তু ওসব নিয়ে আমি কখনোই মিডিয়ায় আলোচনা করতে চাই না। ওসব ওর ব্যক্তিগত ব্যাপার।

১৯৮৯ সালের ডিসেম্বরে যখন কিয়ানু মাই ওউন প্রাইভেট আইডাহো এর স্ক্রিপ্ট পড়লেন, তখনই তার মনে হয়েছিল যে, সিনেমার মিকি চরিত্রটির জন্য রিভার ফিনিক্সের চেয়ে ভালো কেউ হবে না। আর তাই বন্ধুকে রাজি করাতে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি।


মাই ওউন প্রাইভেট আইডাহো সিনেমায় কিয়ানু রিভস ও রিভার ফিনিক্স 
প্যান্টের পেছনের পকেটে ছিদ্র করে, সেখানে গাস ভ্যান সান্টের সেই স্ক্রিপ্ট নিয়ে এক হাজার মাইলেরও বেশি পথ পাড়ি দিয়ে টরন্টো থেকে ফ্লোরিডায় আসলেন তিনি। বন্ধুকে রাজি করিয়েই ছাড়লেন। আজও সেই সিনেমাটি কিয়ানু রিভস ও রিভার ফিনিক্সের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা মাইলফলক হয়ে আছে।

রিভার শুধু একজন অসাধারণ শিল্পীই ছিল না, তার মত মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। প্রত্যেকটা দিন ওকে মিস করি আমি।

সবচেয়ে কাছের বন্ধুকে হারিয়ে আবারও এলোমেলো হয়ে গেল কিয়ানু রিভসের জীবন। কিন্তু তাতে ভেঙে পড়েননি তিনি। দৃঢ় চিত্তে চেষ্টা চালিয়ে গেলেন এগিয়ে যাবার। উল্লেখ্য, আসন্ন জোকার  চলচ্চিত্রে নাম ভূমিকায় অভিনয় করা জোয়াকিন ফিনিক্স ছিলেন রিভার ফিনিক্সের ভাই। জোয়াকিনও কিয়ানু রিভসের ভালো একজন বন্ধু।

অভিনয় ক্যারিয়ারের উত্থান
ব্যক্তিগত জীবনের দুঃখ ভুলতে ক্যারিয়ারে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলেন কিয়ানু। অভিনয় করলেন লিটল বুদ্ধ সিনেমায়। ৯০-এর দশকে বার্নার্ডো বার্তালুচির মতো বড় বড় নির্মাতাদের সাথে কাজ করেছেন তিনি। আর কাজের প্রতি আন্তরিকতার কারণে, পরিচালকরাও তার সাথে কাজ করতে পছন্দ করতেন।


স্পিড সিনেমার দৃশ্যে কিয়ানু ও স্যান্ড্রা 

পরবর্তী কয়েক বছরে বেশ কিছু নামকরা সিনেমায় অভিনয় করলেন। মূলত ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ব্রেকথ্রু তিনি পেয়েছিলেন অ্যাকশন ফিল্ম স্পিড-এ অভিনয় করার মধ্য দিয়ে। ১৯৯৪ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমায় তৎকালীন প্রতিষ্ঠিত তারকা স্যান্ড্রা বুলকের বিপরীতে অভিনয় করে অভাবনীয় সাফল্যই তাকে করে তুললো বিগ বাজেট অ্যাকশন স্টার।

এরপর তিনি আরও বেশি এক্সপেরিমেন্টাল রোলে কাজ করতে শুরু করলেন। এমনকি পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতেও তার কোনো আপত্তি ছিল না। তিনি কেবল খেয়াল করতেন, সিনেমার গল্পে সেই চরিত্রের গুরুত্ব কতখানি।

এ সময় তিনি আ ওয়াক ইন দ্য ক্লাউডস, ফিলিং মিনেসোটা, জনি নেমোনিক, চেইন রিঅ্যাকশন সহ বেশ কিছু প্রশংসিত সিনেমায় কাজ করেন। কিন্তু কোনোটাই স্পিড-এর মতো সাফল্য পায়নি।


পর্দায় আল প্যাচিনোর মুখোমুখি হলেন প্রথমবার 

আর তারপর ১৯৯৭ সালে দ্য ডেভিল’স অ্যাডভোকেট সিনেমায় অভিনয় করে আবারও সাড়া ফেলে দিলেন কিয়ানু। আল প্যাচিনো, শার্লিজ থেরনের মতো তারকাদের সাথে একই পর্দা ভাগাভাগি করে অভিনয় দিয়ে বাজিমাত করা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়! সমালোচকরাও তখন কিয়ানুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। যদিও কেউ কেউ তখনও বিশ্বাস করতেন যে, নিজের সেরাটা দেওয়া তার তখনও বাকি।

জীবনে এলো প্রেম!
ততদিনে কিয়ানু রিভস একজন সফল অভিনেতা। কিন্তু পর্দায় এত সাফল্য পাবার পরও, পর্দার আড়ালে জীবনটা যেন তার সাদা-কালোই রয়ে গিয়েছিল। 

আর সেই সাদা কালো জীবন রাঙিয়ে দিতেই তার জীবনে এলো প্রেম। ১৯৯৮ সালে এক পার্টিতে ডেভিড লিঞ্চের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনিফার সাইমি-র সাথে পরিচয় হয় তার। প্রথম দেখাতেই ভালো লাগা, ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা।সাদাকালো জীবন রাঙিয়ে তুললেন জেনিফার সাইমি
তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকলো। জীবনের সেরা সময়টুকু যেন কাটাচ্ছিলেন কিয়ানু। আরও একবার হাসি ফিরে এলো তার জীবনে। কিন্তু সে হাসি মিলিয়ে যেতেও দেরি হলো না।

অনাগত কন্যা সন্তানের মৃত্যু!
ছোটবেলা থেকেই পারিবারিক অস্থিতিশীলতা দেখে বড় হওয়া কিয়ানু রিভস, তার নতুন প্রেম সাইমিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। বিয়ে না করলেও, ঘর বাঁধার স্বপ্ন থেকেই সন্তান নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তারা। ১৯৯৯ সালে তাদের কোল জুড়ে আসার অপেক্ষায় ছিল এক কন্যা সন্তান।


মিলিয়ে গেল সুখের দিশা
কিন্তু আরও একবার কিয়ানুর জীবনে নেমে এলো বিষাদের কালো ছায়া। শখ করে জেনিফার আর কিয়ানু তাদের অনাগত কন্যাসন্তানের নাম রেখেছিলেন এভা আর্চার সাইমি-রিভস। দুনিয়ার আলো দেখার আগেই মৃত্যু হয় তার।

সে বছর মুক্তি পেল দ্য ম্যাট্রিক্স। লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও, উইল স্মিথ ও ব্যাড পিটকে পেছনে ফেলে বিখ্যাত নিও চরিত্রটিতে কাজ করার সুযোগ পান কিয়ানু রিভস। আর বক্স অফিসে কাঁপিয়ে দিয়ে ওয়াচোস্কি ব্রাদার্সের এই সাই-ফাই সিনেমা, যেন আরও একবার তাকে বেঁচে থাকার আশা জোগানোর চেষ্টা করলো।


দ্য ম্যাট্রিক্স দিয়ে নিজেকে ফিরে পেলেন

অনন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে গেলো তার ক্যারিয়ার। সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে দ্য ম্যাট্রিক্স ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে দুইটি সিক্যুয়েল নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং সে দুটিতেও কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন তিনি।

হারালেন ভালোবাসার মানুষটিকেও!
কন্যাসন্তানের মৃত্যুতে শোক বিহ্বল রিভস-সাইমি দম্পতি সে বছরেরই অক্টোবরে আলাদা হয়ে যান। রেকর্ড এক্সিকিউটিভ অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন সাইমি। ২০০১ সালের ২ এপ্রিল, মেরিলিন ম্যানসনের পার্টি শেষে লস অ্যাঞ্জেলসে নিজের বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি। কিন্তু পথে এক ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তার।


 ভাগ্যবিধাতা কেড়ে নিলেন ভালোবাসার মানুষটিকেও
ওদিকে সে বসন্তে দ্য ম্যাট্রিক্স সিক্যুয়েলের শ্যুটিং শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন কিয়ানু। পুরো ক্যারিয়ার-জুড়ে সবসময়ই ব্যক্তিগত বিষয়ের চেয়ে পেশাদারিত্বকে এগিয়ে রেখেছেন এ অভিনেতা। কিন্তু ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে এতটাই ভেঙে পড়েন যে, নিজেকে শান্ত করতে কিছুদিনের জন্য সবকিছু থেকে ছুটি চেয়ে নেন রিভস। পিছিয়ে যায় দ্য ম্যাট্রিক্স রিলোডেড এর কাজ। 

কাছের মানুষকে হারানোর দুঃখটাও এতটাই আপন যে, সে আগুনের উষ্ণতাও একটা সময় ভালো লাগতে শুরু করে।

বারবার এত ধাক্কা খেয়েও থেমে যাননি এই অভিনেতা। অভিনয় ক্যারিয়ারে নিজেকে ব্যস্ত রাখার মধ্য দিয়ে বারবার শোক ভুলে থাকার চেষ্টা করে গেছেন তিনি। বিপর্যস্ত ব্যক্তিজীবনের সব দুঃখকে পাশ কাটিয়ে দ্বিগুণ শক্তিশালী-রূপে ফিরে এলেন আরও একবার।


দ্য ম্যাট্রিক্স সিকুয়েল দিয়ে ঝড় তুললেন আবারও

২০০৩ সালে যথাক্রমে মুক্তি পেল দ্য ম্যাট্রিক্স রিলোডেড এবং দ্য ম্যাট্রিক্স রেভোল্যুশন। প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সাফল্য পেয়ে আরও উঁচুতে পৌঁছে গেলো তার ক্যারিয়ার। ততদিনে কিয়ানু রিভস নিজেকে বৈচিত্র্যময়, মেধাবী ও পরিণত একজন অভিনেতা হিসেবে হলিউডে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন।

সমালোচকদের আতশী কাঁচের নিচে এসেছেন বারবার
মাঝখানে দ্য গিফট, দ্য ওয়াচার, দ্য রিপ্লেসমেন্টস, সামথিং’স গটা গিভ, সুইট নভেম্বর-এর মতো চলচ্চিত্রগুলোয় অভিনয় করেছিলেন তিনি। কন্যাসন্তান হারিয়ে বিপর্যস্ত কিয়ানু তখন ক্যারিয়ারে ব্যস্ত হয়ে সব ভুলে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন।

কিন্তু, এই চলচ্চিত্রগুলো বক্স অফিসে খুব বেশি সফল হয়নি। পাশাপাশি, তার অভিনয়শৈলী নিয়েও হয়েছে যথেষ্ট সমালোচনা। ২০০৩ সালে দ্য ম্যাট্রিক্সের সফল দুই সিক্যুয়েল দিয়ে, বক্স অফিসের ভরাডুবি নিয়ে ওঠা প্রশ্নগুলো উড়িয়ে দেন তিনি। পাশাপাশি, ২০০৫ সালে মুক্তি পাওয়া হরর থ্রিলার কন্সট্যান্টাইন দিয়ে তার অভিনয়শৈলী নিয়ে প্রশ্ন তোলা সমালোচকদের মুখেও কিয়ানু এঁটে দিলেন কুলুপ। 

ছোট বোন আক্রান্ত হলো লিউকেমিয়ায়

কিয়ানু তার মায়ের একমাত্র পুত্রসন্তান হলেও, প্যাট্রিসিয়ার ছিল তিন কন্যা- এমা রিভস, কারিনা মিলার, কিম রিভস। ২০০১ সালে, হঠাৎ করেই এক ডায়াগনোসিসে যখন কিমের লিউকেমিয়া ধরা পড়ল, তার বয়স তখন ৩৮। চিকিৎসা ও প্রবল মানসিক জোরে প্রায় বছর দশেক লড়াই করার পর, অবশেষে সুস্থ হন কিম। অসুস্থতার এই পুরোটা সময়জুড়ে বোনের পাশে ছিলেন কিয়ানু। 


বোন কিমের পাশেই ছিলেন সবসময়

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি সবসময়ই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে এসেছেন। দু’হাতে দান করেছেন বিভিন্ন দাতব্য সংস্থায়। কিন্তু, চোখের সামনে নিজের বোনকে মৃত্যুর সাথে লড়তে দেখে, অর্থের প্রতি লোভহীন এই মানুষটি যেন আবারও নতুন করে মানুষের পাশে থাকার সুযোগ পেলেন। 

তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত, প্রতি বছর ব্যক্তিগত উপার্জনের একটি অংশ তিনি লিউকেমিয়া গবেষণায় দান করে থাকেন। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি, তিনি নিজেও একটি ফাউন্ডেশন চালু করেছেন। গোপন এ ফাউন্ডেশনটি ক্যান্সার গবেষণা ও শিশু হাসপাতাল নিয়ে কাজ করে থাকে।


মানুষের পাশে থাকার প্রয়াস তার অবিরাম

কিন্তু মানুষকে সাহায্য করে জনসম্মুখে বাহবা নেয়ার মানুষ নন তিনি। তাই নিজের ফাউন্ডেশনের সাথে নিজের নামটা জুড়তেও তিনি নারাজ। এ ব্যাপারে এক সাক্ষাৎকারে দ্য লেডিস হোম জার্নালকে তিনি বলেন, 

আমি এর সাথে নিজের নাম যুক্ত করতে চাই না। বরং ফাউন্ডেশনটি ঠিকঠাক ভাবে কাজ করতে পারছে কিনা, সেটাই মুখ্য।

এছাড়াও স্পাইনাল ইনজুরি নিয়ে কাজ করা সংস্থা SCORE-সহ বহু প্রতিষ্ঠানের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন এই হলিউড আইকন। 

ক্যারিয়ারে আবারও জোয়ার আনলো জন উইক
২০০৬ সাল থেকে ২০১০ পর্যন্ত কিয়ানু রিভস বিভিন্ন বাজেট ও বিভিন্ন ঘরানার চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাই-ফাই থ্রিলার হলো আ স্ক্যানার ডার্কলি, রোমান্টিক ড্রামা দ্য লেক হাউজ, স্ট্রিট কিংস, দ্য ডে দ্য আর্থ স্টুড স্টিল, দ্য প্রাইভেট লাইভস অফ পিপা লি, হেনরি’স ক্রাইম । এদের মধ্যে কয়েকটি সিনেমা দর্শকদেরকে হতাশ করলেও, বাকিগুলো পায় মাঝারি সাফল্য।তার বন্ধু, বিখ্যাত স্টান্টম্যান, টাইগার হু চেন-এর জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ২০১০ সালে কিয়ানু নির্মাণ করেন ম্যান অফ তাই চি। আর এর মধ্য দিয়েই পরিচালক হিসেবে অভিষেক হয় তার।

ফ্রান্সের বিখ্যাত কান চলচ্চিত্র উৎসব ও চীনের বেইজিং চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হলে দর্শকদের ভূয়সী প্রশংসা পায় এ সিনেমা। শুধু তা-ই নয়, বেইজিং চলচ্চিত্র উৎসবে জিতে নেয় সেরা সিনেমার পুরস্কারও।

কেমন ছিল পরিচালক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা? জানতে চাইলে কিয়ানু বলেন, 

একজন অভিনেতা হিসেবে কাজ করার সময় দায়িত্ব থাকে, শুধু নিজের চরিত্রটুকু ফুটিয়ে তোলা। কিন্তু একজন পরিচালকের কাঁধে প্রতিটি চরিত্র ফুটিয়ে তোলার দায়িত্ব থাকে। ফলে, চিন্তাধারায় বড় রকমের পরিবর্তন আনার প্রয়োজন পড়ে।

২০১১ সালে, ডিজিটাল ক্যামেরা কীভাবে ফটো-কেমিকেল ফিল্ম প্রযুক্তির স্থান কেড়ে নিয়েছে, সে বিষয়ক একটি ডকুমেন্টারি নির্মাণ করেন। সাইড বাই সাইড নামের এ ডকুমেন্টারিতে তিনি ক্রিস্টোফার নোলান, মার্টিন স্করসিসে, জেমস ক্যামেরনের মতো ইন্ডাস্ট্রির বাঘা বাঘা সব পরিচালকদের সাক্ষাৎকার নেন।

একই বছর তিনি ওড টু হ্যাপিনেস নামের একটি বইও লেখেন। পরের দুই বছরে মাঝারি বাজেটের জেনারেশন আম… ও ৪৭ রোনিন-এর মতো সিনেমায় কাজ করেন। বলা যায়, শীর্ষ এই হলিউড তারকার ক্যারিয়ারের ঊর্ধ্বগতিতে তখন কিছুটা ভাটাই পড়েছিল।

অবশেষে, ২০১৪ সালে রিভেঞ্জ অ্যাকশন থ্রিলার জন উইক মুক্তি পাবার সাথে সাথেই আবারও হলিউড মেতে উঠলো কিয়ানু বন্দনায়। বক্স অফিসে সাফল্য ও ক্রিটিকদের ভূয়সী প্রশংসা পেয়ে কিয়ানুর ক্যারিয়ারে আবারও এলো জোয়ার। 


নক নক সিনেমায় কিয়ানু রিভস

জন উইক মুক্তি পাবার পরের বছরগুলোয় নক নক, এক্সপোজড , দ্য হোল ট্রুথ, দ্য নিয়ন ডেমন, দ্য ব্যাড ব্যাচ, ডেসটিনেশন ওয়েডিং, রেপ্লিকাস-এ কাজ করেছেন তিনি। নিশ্চিত সাফল্যের দিকে না ঝুঁকে বারবার বেছে নিয়েছেন বৈচিত্র্যময় চ্যালেঞ্জিং রোল। অ্যাকশনধর্মী কাজে এতটা সফল হওয়া সত্ত্বেও সেখানেই আটকে না থেকে, নিজের ওপর চালিয়ে গেছেন পরীক্ষা। ফলে বরাবরের মতোই বেশ কিছু সিনেমা বক্স অফিসে তেমন সুবিধে করতে পারেনি। আর সবকিছু ছাপিয়ে সর্বশেষ বছরগুলোয় জন উইক হিসেবেই আইকনিক অ্যাকশন ফিগারে পরিণত হয়েছেন কিয়ানু রিভস।

সুখের টানে ছুটে চলা!

সামাজিক মূল্যবোধকে তুলে ধরে, এমন যেকোনো চরিত্রে কাজ করার প্রতিই সবসময় বিশেষ ঝোঁক ছিল তার। এমনকি শুধুমাত্র এই ঝোঁকের কারণে, তিনি ৫.৫ মিলিয়ন ডলারের সিনেমা-প্রস্তাব পর্যন্ত ফিরিয়ে দিয়েছেন। তার চেয়েও বড় কথা, সে সিনেমায় রবার্ট ডি নিরো এবং আল প্যাচিনোর সাথে অংশ নেয়ার সুযোগ ছিল তার সামনে। হিট নামের সেই সিনেমায় পরবর্তীকালে কিয়ানুর স্থলাভিষিক্ত হন ভল কিলমার। 


Heat সিনেমার একটি দৃশ্য আল প্যাচিনো ও রবার্ট ডি নিরো 
ঐ সিনেমায় কাজ করার বদলে তিনি হ্যামলেট চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, কানাডার ম্যানিটোবা থিয়েটার সেন্টারে। সেখানে তার সাপ্তাহিক সম্মানী ছিল ২ হাজার ডলারেরও কম!

কিন্তু সম্মানী বা খ্যাতির তারতম্য নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা তো ছিলই না, বরং হ্যামলেট চরিত্রে অভিনয় করতে পেরেছেন বলেই তিনি বেশি খুশি ছিলেন।  

১৯৯৯ সালের বিখ্যাত অ্যাকশন সিনেমা দ্য ম্যাট্রিক্স ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে তিনি আয় করেন প্রায় ১১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু দ্য ম্যাট্রিক্স-এর সাফল্যের পর পরবর্তী দুই সিক্যুয়েলে স্পেশাল ইফেক্টস ও কস্টিউম ডিজাইনার টিম যেন আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারে, তাই নিজের পারিশ্রমিক থেকে কিয়ানু তাদেরকে ৮০ মিলিয়ন ডলার উপহার দেন।

কিয়ানু মনে করেন, তাদের কারণেই দ্য ম্যাট্রিক্স এত ভালোভাবে বানানো সম্ভব হয়েছে। তাই এ সম্মাননাটুকু তাদেরই প্রাপ্য।


অ্যাকশন দৃশ্যে ভিজুয়াল ইফেক্টসের ব্যবহার

এছাড়াও, দ্য ম্যাট্রিক্স সিনেমায় স্টান্ট স্টাফদেরকে হার্লে-ডেভিডসন মোটরসাইকেল উপহার দিয়েছিলেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে, সিয়াটল পোস্ট-ইন্টেলিজেন্সারকে কিয়ানু বলেন, 

সিনেমায় সবকিছু আমরা একসাথেই করতাম। আমরা একসাথে ট্রেনিংও নিয়েছিলাম। আর সেজন্যই, আমাকে কাজটা করতে সাহায্য করা মানুষগুলোকে একটু ভালোভাবে ধন্যবাদ জানাতে চেয়েছিলাম। আমার মনে হয়, সিনেমা ইতিহাসের সেরা ফাইট সিনগুলোর মধ্যে এটা অন্যতম।

শ্বাসরুদ্ধকর সেই মার্শাল-আর্ট দৃশ্যে ছিল পাঁচ শতাধিক মুভ। শ্যুটিং শেষে কিয়ানু ও স্টান্টম্যানদের বিশেষ ট্রিটমেন্ট পর্যন্ত নিতে হয়েছিল। ঐতিহাসিক সে দৃশ্য আজও ফ্যানদের প্রিয় অ্যাকশন সিকোয়েন্স তালিকায় ওপরের দিকেই থাকবে। 

দ্য ডেভিল’স অ্যাডভোকেট সিনেমায় আল প্যাচিনোর সাথে অভিনয় করার কথা ছিল তার। কিন্তু হলিউডের তারকা অভিনেতা আল প্যাচিনোকে নিতে টান পড়েছিল সিনেমার কাস্টিং বাজেটে।

আর তাই, সিনেমাটির নির্মাণ যেন বাধার মুখে না পড়ে, সেজন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন কিয়ানু। নিজের দিক থেকে কমিয়ে মাত্র এক মিলিয়ন ডলার সম্মানী নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। আর এরই মাধ্যমে সে যাত্রায় রক্ষা পেয়েছিলেন সিনেমাটির নির্মাতারা।


হলিউড তারকা জিন হ্যাকম্যান

ঠিক একই কাজ তিনি করেছিলেন দ্য রিপ্লেসমেন্টস সিনেমায়। আর সে বার আল প্যাচিনোর জায়গায় মানুষটি ছিলেন জিন হ্যাকম্যান। অর্থের প্রতি সব রকম টানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আবারও নিজের সম্মানীর ৯০% ছেড়ে দিয়ে সে সিনেমায় হলিউড তারকা জিন হ্যাকম্যানকে নেয়ার সুযোগ করে দেন কিয়ানু।

অর্থ আমার কাছে সবসময়ই মূল্যহীন। জীবনে বহু অর্থ উপার্জন করেছি আমি। কিন্তু আমি জীবনটাকে উপভোগ করতে চাই। ব্যাংক ব্যালেন্স বৃদ্ধি করার জন্য ছুটে নিজের সুখ নষ্ট করতে চাই না। আর আমি দান করতেও পছন্দ করি। পছন্দ করি সাধারণ জীবনযাপন করতে। অধিকাংশ সময় হোটেলের স্যুটকেস থেকেই দেই। আর সুস্বাস্থ্যের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই হতে পারে না।

সবসময়ই নিজের পছন্দ ও সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দিয়েছেন তিনি। এমনকি বিশাল পারিশ্রমিক পাবার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও, অতি সাধারণ কারণে একাধিক সিনেমা ফিরিয়ে দিয়েছেন খুঁতখুঁতে স্বভাবের এ অভিনেতা। 

যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি সিনেমা হলো প্লাটুন ও স্পিড রেসার। প্লাটুন সিনেমায় প্রাইভেট ক্রিস টেইলর চরিত্রে অভিনয় করার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়ার পেছনে কারণ ছিল সিনেমাটির মাত্রাতিরিক্ত সহিংসতা। তার বদলে অভিনয় করেন চার্লি শিন। এছাড়াও স্পিড রেসার সিনেমায় একজন রেসার এক্স চরিত্রে অভিনয় করার প্রস্তাব পেয়েও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু কেউ কল্পনাও করতে পারেনি যে, কিয়ানু রিভস তার ক্যারিয়ারের অন্যতম প্রধান মাইলফলক স্পিড সিনেমার সিক্যুয়েলে কাজ করার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেবেন। কিন্তু অ্যাকশন-থ্রিলারটির দ্বিতীয় কিস্তির গল্প পছন্দ না হওয়ায় কাজ করতে রাজি হননি তিনি।


ট্রিভিয়া

তার বিল অ্যান্ড টেডের সহ-অভিনেতা অ্যালেক্স উইন্টার সহ খুব ভাল বন্ধু এবং তার সাথে যোগাযোগ রেখেছেন। কেয়ানুও ক্যামিওর উপস্থিতিতে অবদান রেখেছেন এবং শীতের বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র প্রকল্পে সহায়তা করেছেন।
ম্যাট্রিক্স পুনরায় লোডড (2003) এর জন্য 200 টিরও বেশি মার্শাল আর্ট মুভ শিখেছে।
প্রতিস্থাপন (2000) এ তার বেতনের উপর 90% বেতন কেটে নিয়েছিল যাতে জিন হ্যাকম্যানকে কাস্ট করা যেতে পারে। পূর্বে, তিনি তার বেতনের 2 মিলিয়ন ডলার পিছিয়ে রেখেছিলেন যাতে আল পাচিনোকে ডেভিলস অ্যাডভোকেট (1997) এ ফেলে দেওয়া যেতে পারে।
তার নামটির অর্থ হাওয়াইয়ানে "পাহাড়ের উপরে শীতল বাতাস"।
তাঁর মা প্যাট্রিক রিভস ছিলেন অ্যালিস কুপারের মতো রক স্টারদের পোশাক ডিজাইনার।

sourse:  archive ... imdb 

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0