আল ফারাবি এর জীবনী | biography of al farabi
আল ফারাবি এর জীবনী

দর্শন ও বিজ্ঞানে আল ফারাবির অবদান
আল ফারাবি
(ফার্সি: ابونصر محمد بن محمد فارابی, আবু নসর মুহম্মদ বিন মুহম্মদ আল ফারাবি, একজন প্রখ্যাত মুসলিম দার্শনিক ও বিজ্ঞানী।
এছাড়াও তিনি একজন মহাবিশ্বতত্ত্ববিদ, যুক্তিবিদ এবং সুরকার ছিলেন। পদার্থ বিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান, দর্শন, যুক্তিশাস্ত্র, গণিতশাস্ত্র, চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রভৃতিতে তার অবদান উল্লেখযোগ্য। পদার্থ বিজ্ঞানে তিনিই 'শূন্যতা'-র অবস্থান প্রমাণ করেছিলেন। তিনি ৮৭২, মতান্তরে ৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে তুর্কিস্তানের অন্তর্গত 'ফারাব' নামক শহরের নিকটবর্তী 'আল ওয়াসিজ' নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।
আল ফারাবী [৮৭০-৯৬৬ খ্রিঃ]
পৃথিবীতে মুসলমানদের উন্নতির জন্যে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আশীর্বাদ হিসেবে যুগে যুগে যে সকল মুসলিম বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের পৃথিবীতে পাঠিয়ে ছিলেন আল ফারাবী তাঁদের অন্যতম । তাঁর জন্ম তারিখ কত তা সঠিক ভাবে জানা যায় না । তাঁর জন্ম তারিখের ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে । এর অন্যতম কারণ হল তৎকালীন যুগে কারো জন্ম তারিখ লিপিবদ্ধ করে রাখার ব্যাপারে তেমন কোন গুরুত্ব ছিল না ।
যতদূর জানা যায় এ মনীষী ৮৭০ খ্রিস্টাব্দে তুর্কিস্তানের অন্তর্গত ‘ফারাব’ নামক শহরের নিকটবর্তী ‘আল ওয়াসিজ’ নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । ‘ফারাব’ নামক শহরের নামানুসারে আবু নাসের মোহাম্মদ পরবর্তীতে ‘আল ফারাবী’ নামে পরিচিত হন । বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী পাঠ করলে দেখা যায়, অনেকেই তাঁদের জন্মস্থান, নিকটবর্তী শহর কিংবা দেশের নামে পরিচিত ছিলেন । আল ফারাবীর ক্ষেত্রেও তাঁর বিপরীত ঘটেনি । ইউরোপীয় পণ্ডিতগণ তাঁর নামকে বিকৃত করে ‘ফারাবিয়াস’ লিপিব্ধ করেছেন । আল ফারাবীর পিতা ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত এবং সেনাবাহিনীর একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা । তাঁর পূর্ব পুরুষগণ ছিলেন পারস্যের অধিবাসী । ইসলাম ধর্ম গ্রহণ ও রাজনৈতিক কারণে তাঁর পূর্ব পুরুষগণ পারস্য ত্যাগ করে তুর্কিস্তানে এসে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন ।
অবদান
আল ফারাবী দর্শন ছাড়াও যুক্তিবিদ্যা ও সঙ্গীত-এর ন্যায় জ্ঞানের বিস্তর শাখায় অবদান রাখেন। আল মদিনা আল ফাজিলা বা আদর্শ নগর তার সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ। কিতাব আল মুসিকি আল কবির বা সঙ্গীতের মহান গ্রন্থ তার আরেকটি বিখ্যাত গ্রন্থ।
দর্শন:
প্লেটো ও অ্যারিস্টটল-এর দর্শনের উপর তিনি বিস্তর আলোচনা করেছেন। প্লেটোর রিপাবলিক-এর মত তিনিও একটি আদর্শ রাষ্ট্র-এর কল্পনা করেছেন তার আদর্শ নগর গ্রন্থে। তিনি স্রষ্টার সর্বাধিপত্য স্বীকারের পাশাপাশি সৃষ্টিকেও শাশ্বত বলে মনে করতেন। তিনি কোন চরম মত পোষণ করতেন না এবং চিন্তার ক্ষেত্রে পরস্পর-বিরোধী মতকে প্রায়শই একসাথে মিলাবার চেষ্টা করেছেন।
রাষ্ট্র দর্শন
আদর্শ নগর-এ তার রাষ্ট্রনায়ক-এর একনায়ক বৈশিষ্ট প্রকট। তার মতে রাষ্ট্রের প্রধান রাষ্ট্রের সর্বৈব ক্ষমতা পোষণ করবেন এবং অন্য সবাই তার বাধ্য থাকবেন। নাগরিকদের ক্ষমতায়ও থাকবে শ্রেণি বিভাজন, যেখানে কোনো শ্রেণি তার উপরের শ্রেণির আদেশ মান্য করবে ও নিচের শ্রেণির উপর আদেশ জারী করবে। তৎকালীন বহুধাবিভক্ত সামন্ততান্ত্রিক সমাজকে এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রকাঠামোর আওতায় আনতে এই রাষ্ট্র দর্শন প্রভাব বিস্তার করে এবং সময়ের বিচারে এরূপ ভাবধারা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আদর্শ রাষ্ট্রকে তিনি অসম্ভব উল্লেখ করলেও এটি অর্জনের জন্য মানুষের চিরন্তন প্রচেষ্টাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করেন। মুসলিম মিল্লাতে তার অবদান অনস্বীকার্য।
কল্যাণকামী রাষ্ট্রের শাসক হচ্ছেন বিচক্ষণ ও বিজ্ঞ ব্যক্তি, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে রাষ্ট্রের উন্নতি ও সার্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠা, যদি রাষ্ট্রের শাসনতন্ত্র জনগণের কল্যাণ সাধনে ব্যর্থ হয় এবং শাসকদের রাষ্ট্র শাসনের প্রয়োজনীয় গুণাবলি না থাকে তবে সেই রাষ্ট্রকে অকল্যাণকামী রাষ্ট্র বলা যেতে পারে। তিনি অকল্যাণকামী রাষ্ট্রকে ছয় শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। যথা–
পরিশেষে, কল্যাণকামী রাষ্ট্রের মধ্যে পরগাছাধর্মী স্বার্থান্বেষী মহলের অশুভ তৎপরতা সম্পর্কে ফারাবী আমাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে সিয়াসাতুল মাদানীয়াহর অনুসরণে আমরা প্রথমে অকল্যাণকামী রাষ্ট্রের ছয়টি বিভাগ আলোচনার পরে অনৈতিক ও ভ্রান্ত রাষ্ট্র সম্পর্কে বর্ণনা দেব এবং সর্বশেষে কল্যাণকামী রাষ্ট্রে স্বার্থান্বেষী মহলের অশুভ তৎপরতা সম্পর্কে আলোচনা করব।
ইসলামের স্বর্ণযুগে মুসলিমদের নিকট সক্রেটিস, প্লেটো আর অ্যারিস্টটলদের দর্শন অনুবাদের মাধ্যমে যারা পরিচয় করে দিয়েছিলেন, আবু নাসের মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ আল ফারাবি তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য একজন। মুসলিম দার্শনিকদের মধ্যে তার ছিল ভীষণ প্রভাব। বিশেষ করে ইবনে সিনা তার কাজ দ্বারা ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তিনি একজন বিখ্যাত ভাষাবিদ ছিলেন যিনি গ্রীক আর ল্যাটিন থেকে অনেক কিছুই অনুবাদ করে মুসলিমদের জ্ঞানচর্চার পথ সুগম করেছিলেন। অন্যদিকে আলকেমি, যুক্তিশাস্ত্র, দর্শন, পদার্থবিজ্ঞান এবং মনোবিজ্ঞানেও রয়েছে আল ফারাবির অবদান।
মৃত্যু:
৯৫৬ খ্রিঃ দামেস্ক |
What's Your Reaction?






