যীশু খ্রীষ্ট জীবনী, Best biography of Jesus Christ in Bengali
যীশু খ্রীষ্ট জীবনী, Best biography of Jesus Christ in Bengali

জন্ম |
খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন ২৫ শে ডিসেম্বর, যা ‘বড়দিন’ হিসেবে পালিত হয়। |
মৃত্যু |
যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যুর তারিখ নিয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন মত পোষণ করেছেন, তা নিচে দেওয়া হল |
যিশুখ্রিস্ট কে ছিলেন? Who was Jesus Christ?
যিশুখ্রিস্ট একজন ইহুদি ধর্মপ্রচারক ছিলেন। অন্যদিকে তিনি সারা বিশ্বে খ্রিস্টধর্মের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবেও গণ্য হন। যিশুকে প্রদত্ত ‘খ্রিস্ট’ উপাধি থেকেই খ্রিস্টধর্মের নামকরণ হয়েছে। খ্রিস্টানদের বিশ্বাস যে, যিশু স্বয়ং ঈশ্বরের পুত্র।
যীশুর জন্ম, Birth of Jesus Christ
খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন ২৫ শে ডিসেম্বর, যা ‘বড়দিন’ হিসেবে পালিত হয়। এই বড়দিন অত্যন্ত একটি পবিত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত। যদিও বাইবেল পড়লে সেখানে যীশুর জন্মের কোন সঠিক দিনক্ষণ সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না, তবুও খ্রিস্টানদের মতে ২৫ শে ডিসেম্বর যীশুর জন্ম তারিখ এবং এই দিনে পরস্পরকে উপহার দেওয়া, ক্রিসমাস ট্রি সাজানো, ভালো খাবার খাওয়া আর অব্যশই সান্তা ক্লজের অপেক্ষা করার মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হয়।
যীশুর বাল্যকাল, Childhood of Jesus Christ
যীশুর জন্ম হয়েছিল রোমান সাম্রাজ্যের বৈৎলেহম, যিহূদিয়াতে। তাঁর জন্মের তারিখ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বহু বিতর্ক রয়েছে, কারণ কোথাও যীশুর জন্ম তারিখের উল্লেখ পাওয়া যায় নি। তাঁর মাতার নাম মরিয়ম বা মেরি এবং পিতা ছিলেন যোষেফ।
যীশু খ্রিস্টের জন্মের সময়কালে শাসক ইহুদী রাজার রাজ জ্যোতিষী থেকে জানতে পেরেছিলেন যে নবজাত একটি শিশু খুব শিঘ্রই এই দেশের রাজা হবেন। তখন হেরদ দারুণভাবে আতঙ্কিত এবং বিদ্বেষপরায়ণ হয়ে উঠেন। হেরদ বিদ্বেষের বশে আশেপাশের সকল নবজাতক পুরুষ সন্তানকে হত্যা করার আদেশ দিলেন।
এই খবর পেয়ে যীশুর পিতা জোসেফ ও মাতা মেরী তাদের নবজাতক শিশুসন্তানকে নিয়ে মিশরে চলে যান। পরবর্তীতে রাজা হেরদের মৃত্যু ঘটার পর যীশু নিজ প্রদেশ নাজরাথে ফিরে আসেন।
যীশু খ্রীষ্টের ধর্মীয় বাণী প্রচার, Preaching the religious message of Jesus Christ
যীশুকে অনেকেই ঈশ্বরের স্বরূপ বলে মনে করতেন, কিন্তু যীশু কখনো নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবি করেন নি। খ্রিষ্টান ধর্মগুরু যীশু খ্রীষ্টের বয়স যখন ৩০ বছর হয়, তখন থেকেই তিনি সকলের প্রকাশ্যে বিভিন্ন স্থানে ঈশ্বরের বাণী প্রচারের কাজ শুরু করেন। যীশু একান্ত সাধারণ ভাষায় ধর্ম প্রচার করতেন। তিনি গল্পের মতো বাণী শুনিয়ে সকলের মনে ধর্মীয় বিশ্বাস জাগ্রত করার চেষ্টা করেন। ঈশ্বরের বাণী প্রচারের সাথে যীশু সকলকে ডেকে বলতেন —
“মানুষকে ভালোবাসতে শেখ। মানুষের সকল অপরাধ ক্ষমা করে দাও। যারা তোমার শত্রু তাদেরকেও ভালোবাসো। মানুষকে ভালোবাসলেই ঈশ্বরও তোমাকে ভালোবাসবেন।”
যীশুর এইরূপ মহান উপদেশগুলো শুনে আশেপাশের মানুষজন দল বেঁধে তাঁর কথাগুলো শোনার উদ্দেশ্যে আসতে থাকে, এইভাবেই ধীরে ধীরে তাঁর অনুসারীর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। যীশুর মুখে বলা অমৃতবাণীগুলো শোনার জন্য সকলে যেন আকুল হয়ে থাকতো।
যিশু খ্রিস্টের বাণী
- তোমরা তোমাদের শত্রুদেরকে ভালবাসবে। যে সকল লোক তোমাদেরকে হিংসা করে তাদের মঙ্গলে কাজ করবে। আর যারা তোমাদেরকে অভিশাপ দেয় তাদেরকে করবে আশীর্বাদ। যে সকল মানুষ তোমাদেরকে নিন্দা করে, তাদেরকে তাদের জন্য তোমরা প্রার্থনা করবে।
- যদি কোন ব্যক্তি তোমার এক গালে চড় মারে তাহলে তুমি তার দিকে তোমার অপর গালটিও বাড়িয়ে দিবে চড় খাওয়ার জন্য।
- যে তোমার কাছে চায়, তাকে তা দাও। যে তোমার দ্রব্য তোমার কাছ থেকে তুলে নেয়, তুমি তাকে তা দিয়ে দাও চেওনা।
- তোমরা দান করবে। দোষী ব্যক্তির দোষ ঢেকে রাখবে। তুমি যাকে যতটুকু দান করবে তার চেয়ে বেশি তোমাকে দেওয়া হবে।
- শিষ্য কখনোই গুরুর চেয়ে বড় হতে পারবে না। তবে যে শীর্ষ পরিপক্ক হবে সে তার গুরুর তুলল হতে পারবে।
যীশুর জীবনকাল, Lifetime of Jesus
খ্রিস্ট ধর্মগুরু যীশু একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন, এই বিষয়টি প্রাচীন ইতিহাসের সময়কাল থেকে সকল আধুনিক গবেষকই স্বীকার করেছেন। যীশু একজন ইহুদি ছিলেন। তিনি বাপ্তিস্মদাতা যোহন কর্তৃক দীক্ষিত হওয়ার পর থেকে ধর্ম পরিচর্যা ও প্রচারণা শুরু করেছিলেন। তিনি সর্বদা মৌখিকভাবে নিজের ধর্মীয় প্রচারকার্য করতেন।
প্রায়শই তাঁকে “রব্বি” বলে সম্মোধন করা হত। সময় বিশেষে যীশু তাঁর সঙ্গী ইহুদিদের সাথে ঈশ্বরকে অনুসরণ করার শ্রেষ্ঠ উপায় নিয়েও বিতর্কে অবতীর্ণ হন, অন্যদিকে তিনি আশেপাশের রোগগ্রস্থদেরকেও আরোগ্যদান করতেন। তিনি রূপক কাহিনী বর্ণনার মধ্য দিয়ে শিক্ষাদান করে অনুগামীদেরকে একত্র করেন। একসময় যিশুর বিরুদ্ধে রাজদ্রোহ করার আরোপ, সিজারকে রাজস্বদানে বাধা দান করা এবং নিজেকে রাজা বলে ঘোষণা করার মত অভিযোগগুলো আনা হয়।
পরবর্তী সময়ে তাঁকে রোমান সরকারের নির্দেশে গ্রেফতার করা হয়, এরপর ইহুদি কর্তৃপক্ষ মিলে তাঁর সম্পর্কে বিচার করেন। অতঃপর তাঁকে তুলে দেওয়া হয় রোমান সরকারের হাতে। তৎকালীন রোমান গভর্নর পন্তীয় পীলাতের আদেশ অনুযায়ী তাঁর পুরো শরীরে ক্রুশারোপণ করা হয়েছিল। এই ক্রুশবিদ্ধ অবস্থাতেই যীশুর মৃত্যু হয়। আনুমানিক ৩০-৩৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তাকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে তাঁর অনুগামীদের বিশ্বাস ছিল যে, যিশু মৃত্যুর পর পুনর্জীবন লাভ করেছিলেন, পরবর্তীতে এই অনুগামীরা মিলে যে সমাজ গঠন করেছিলেন সেটাই সময়ের সাথে খ্রিস্টীয় চার্চে পরিণত হয়েছিল।
তবে ইহুদিরা এই বিষয়ে বিশ্বাস করেন না যে, যীশুই একসময় সেই নবজাতক ছিল, যাঁর সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল যে সে ইহুদী রাজা হবে। ইহুদিদের মত অনুসারে, ক্রুশবিদ্ধ হয়ে যীশুর মৃত্যুই এটা প্রমাণ করে দেয় যে ঈশ্বর তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এমনকি যীশুর পুনর্জীবন লাভকেও তারা একটি খ্রিস্টীয় কিংবদন্তি বলে মনে করেন।
ধর্মীয় নির্মমতা যে কতটা মর্মান্তিক হতে পারে, তা যীশুর মৃত্যুর কাহিনী শুনলেই বোঝা যায়। যীশুকে যে ক্রুশকাষ্ঠে হত্যা করা হয়েছিল , সেই কাষ্ঠটি তাঁকে দিয়েই বহন করিয়ে আনা হয়েছিল। এইভাবেই কিছু উগ্র ধর্মান্ধ তথা নিকৃষ্ট মানবের হাতে ঈশ্বর প্রেরিত মহামানব যীশুখ্রীষ্ট নিষ্ঠুরভাবে নিহত হয়েছিলেন। যীশু নিজের শেষ শ্বাস ত্যাগ করার আগে চিৎকার করে বলেছিলেন, “পিতঃ, তোমার হস্তে আমার আত্মা সমর্পণ করি ” এই বলেই তিনি প্রাণ ত্যাগ করেন।
খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, Beliefs of Christians
খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন যে, সারা বিশ্বে যীশুর এক ‘স্বতন্ত্র গুরুত্ব’ বর্তমান। খ্রিস্টীয় মতবাদের মধ্যে পবিত্র আত্মার প্রভাবে যীশুর মেরি নামের এক কুমারীর গর্ভে জন্ম নেওয়ার বিষয়টির উপর বিশ্বাস রয়েছে।
এছাড়াও তাঁর নানা অলৌকিক কার্য সম্পাদন করা, চার্চ প্রতিষ্ঠা করা, প্রতিকার বিধান হিসেবে আত্মত্যাগ স্বরূপ ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করা, তাঁর পুনর্জীবন লাভ, স্বর্গে আরোহণ তথা ভবিষ্যতে পুনরাগমন সংক্রান্ত বিশ্বাসও রয়েছে খ্রিস্টানদের মধ্যে। অধিকাংশ খ্রিস্টধর্মীর বিশ্বাস যে, যিশুর মধ্যে ঈশ্বরের সাথে মানুষের পুনর্মিলন ঘটানোর শক্তি আছে।
যীশুর ক্রুশারোহণের দিনটি ছিল শুক্রবার, পরবর্তী সময়ে তার অনুরাগীরা দিনটিকে গুড ফ্রাইডে হিসেবে পালন করতে শুরু করে এবং যীশুর পুনর্জীবন লাভের দিনটি ইস্টার হিসেবে পরিচিতি পায়। যিশুখ্রিস্টের জন্মের উপর ভিত্তি করেই সালের গণনারীতি শুরু করা হয়। যীশুর জন্মের পূর্বের যে বছরগুলোকে গণনা করা হয়, সেগুলো হলো খ্রিস্টপূর্বাব্দ। এই গণনারীতি অনুযায়ী সংখ্যা হিসেবে কোনও শূন্য বছর নেই, যিশুখ্রিস্টের জন্মের বছরটিকেই খ্রিস্টপূর্বাবদের বছরগুলোর শেষ বছর এবং খ্রিস্টাব্দের প্রথম বছর হিসেবে ধরা হয়।
ইসলাম ধর্মে যীশুর উল্লেখ, References to Jesus in Islam
যীশু ইসলামে ঈসা হিসেবে পরিচিত। ইসলাম ধর্মে তাঁকে আল্লাহর একজন গুরুত্বপূর্ণ নবী তথা মসিহ বলে বর্ণনা করা হয়। মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন যে, খ্রিস্ট ধর্ম প্রবর্তক যিশু একজন শাস্ত্র আনয়নকারী নবী তথা রাসূল ছিলেন। তবে তারা যিশুকে কখনোই ঈশ্বরপুত্র বলে মনে করেন নি। কুরআনের বর্ণনা অনুসারে, যীশু খ্রীষ্ট নিজে কখনো নিজের ঈশ্বরত্বের দাবি করেন নি। তবে মুসলমানরা মনে করেন যে, যিশু কখনও ক্রুশবিদ্ধ হননি, বরং ঈশ্বর নিজে তাঁকে সশরীরে স্বর্গে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন।
যিশু খ্রিস্টের মৃত্যুর তারিখ
What's Your Reaction?






