আমাদের স্বপ্নের নায়ক, মহানায়ক সালমান শাহর জীবনী

আমাদের স্বপ্নের নায়ক, মহানায়ক সালমান শাহর জীবনী

May 10, 2025 - 00:06
May 10, 2025 - 00:53
 0  1
আমাদের স্বপ্নের নায়ক, মহানায়ক সালমান শাহর জীবনী

আসল নাম :

 চৌধুরী সালমান শাহরিয়ার ইমন

জন্ম :

 ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১, রবিবার

বাবা :

 কমর উদ্দিন চৌধুরী

মা :

 নীলা চৌধুরী

স্ত্রী :

 সামিরা

উচ্চতা :

 ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি

প্রথম চলচ্চিত্র :

 কেয়ামত থেকে কেয়ামত

শেষ ছবি :

 বুকের ভেতর আগুন
নাটক :  ধারাবাহিক নাটক : পাথর সময়, ইতিকথা
 একক নাটক : আকাশ ছোঁয়া, দোয়েল, সব পাখি ঘরে ফেরে, সৈকতে সারস, নয়ন, স্বপ্নের পৃথিবী।

মোট ছবি :

 ২৭টি

সর্বাধিক ছবির নায়িকা :

 শাবনূর (১৪টি)

প্রথম নায়িকা :

 মৌসুমী

মৃত্যু :

 ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬, শুক্রবার

বাংলাদেশী চলচ্চিত্রে নব্বইয়ের দশকের উজ্জল নক্ষত্র সালমান শাহ (১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ – ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬)। তিনি ছিলেন একজন বাংলাদেশী অভিনেতা ও মডেল। তিনি অল্প দিনে অভিনয় দিয়ে বাংলার চলচ্চিত্র প্রেমীদের মনজয় করছিলেন। তিনি চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন ১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবিতে। মাত্র চার বছরের অভিনয় জীবন তার। এই অল্প সময়ে তৈরী করেছিলেন অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগী। তিনি যতক্ষণ এফডিসিতে থাকতেন, গেটের বাইরে হাজার হাজার মানুষ অপেক্ষায় থাকতো তাঁকে একবার দেখার জন্য। এরকম জনপ্রিয়তা আর কোনো নায়কের ভাগ্যে জোটেনি। সালমান শাহ সর্বমোট ২৭ টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন এবং সবকয়টিই ছিল ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র।

জন্ম

সালমান শাহ ১৯৭১ সালে ১৯ সেপ্টেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন সিলেট শহরে দাড়িয়া পাড়াস্থ তার নানার বাড়িতে।  তার পিতার নাম কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মাতা নীলা চৌধুরী। তাদের দুই ছেলের  মধ্যে সালমান শাহ ছিলেন বড় ছেলে। তার পারিবারিক নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন, কিন্তু চলচ্চিত্র জীবনে তিনি সবার কাছে সালমান শাহ বলেই পরিচিত ছিলেন।

শিক্ষাজীবন

সালমান শাহ পড়াশুনা শুরু করেন খুলনার বয়রা মডের হাইস্কুলে। তার সাথে একই স্কুলে চিত্রনায়িকা মৌসুমী পড়ালেখা করেন।  তিনি ১৯৮৭ সালে ঢাকার ধানমন্ডি আরব মিশন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরে তিনি আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও ধানমন্ডির মালেকা সায়েন্স কলেজ ( বর্তমান ডক্টর মালিকা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ) থেকে বি. কম. পাস করেন।

রূপালী পর্দা

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের রূপালী পর্দার নব্বইয়ের দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও সুদর্শন নায়কের নাম সালমান শাহ। সামগ্রিক অর্থে দ্যুতিময় এক শিল্পীর নাম সালমান শাহ। প্রকৃত নাম শাহরিয়ার চৌধুর্রী ইমন। সোহানুর রহমান সোহানের হাত ধরে কেয়ামত থেকে কেয়ামত চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্রজগতে পদার্পন করেন সালমান শাহ। প্রথম ছবিতেই জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হন। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি তাকে। একের পর এক ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র উপহার দিয়ে গেছেন।

কেয়ামত থেকে কেয়ামত এর মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে অভিনয়জীবন শুরু এবং বুকের ভেতর আগুন চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সমাপ্তি। এই অভিনেতা সর্বমোট ২৭টি চলচ্চিত্র অভিনয় করেন। সবচেয়ে বেশী ১৪টি ছবিতে জুটি বেধেছেন শাবনূরের সাথে। এছাড়াও টেলিভিশনে তার অভিনীত গুটি কয়েক নাটক প্রচারিত হয়। নিজের সত্তাকে স্বেচ্ছায় পরিবর্তন করা জনপ্রিয় এই নায়ক নব্বইয়ের দশকের বাংলাদেশে সাড়া জাগানো অনেক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৯০-এর দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নায়ক সালমান শাহ এর আজ ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবারণ করেন। অকাল প্রয়াত জনপ্রিয় এই নায়কের মৃত্যুদিনে তার প্রতি রইল আমাদের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময়ে ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেট জেলায় অবস্থিত জকিগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন ওরফে সালমান শাহ। তাঁর পিতার নাম কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মাতার নাম নীলা চৌধুরী। সালমানের দাদার বাড়ি সিলেট শহরের শেখঘাটে আর নানার বাড়ি দারিয়া পাড়ায় । যে বাড়ির নাম এখন ‘সালমান শাহ হাউস’ । তার নানার মুলবাড়ি ছিল মৌলভিবাজারে। সালমান শাহ খুলনা বয়রা মডেল হাইস্কুল শেষে ১৯৮৭ সালে ধানিমন্ডির আরব মিশন স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন।

পরবর্তীতে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি এবং মালেকা সায়েন্স কলেজ, ধানমন্ডি থেকে স্নাতক শেষ করেন। বৃশ্চিক রাশির জাতক ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন ছিলেন পরিবারের বড় ছেলে। যে নামের পরিবর্তন ঘটে ঢাকাই চলচ্চিত্রের চরম দুঃসময়ে ৯৩’তে এসে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। চলচ্চিত্রে তার নাম হয় সালমান শাহ । চলচ্চিত্র জীবনে সবার কাছে 'সালমান শাহ' বলেই পরিচিত ছিলেন তিনি।

সিনেমা জগতে আসার পূর্বেই বিয়ে করেছিলেন এই সুদর্শন নায়ক। সালমান শাহ ১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট ২১ বছর বয়সে সামিরাকে বিয়ে করে সংসার জীবনে প্রবেশ করেন। সালমানের স্ত্রী সামিরার মায়ের ছোটবেলার বান্ধবী ছিলেন সালমানের মা নীলা চৌধুরী। ছোটবেলায় দুই বান্ধবী ঠিক করেছিলেন সালমান ও সামিরার বিয়ে হবে। বিয়ের পর ম্যাজিষ্ট্রেট নাহিদ হাসান (সজীব) এর হাত ধরে অভিনয় জগতে আসেন সালমান শাহ। কিন্তু পরবর্তী জীবনে নাহিদ হাসান (সজীব) এর সাথে তার সম্পর্ক ভাল ছিল না । ১৯৯৩ সালে তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত কেয়ামত থেকে কেয়ামত মুক্তি পায়। একই ছবিতে নায়িকা মৌসুমী ও গায়ক আগুনের অভিষেক হয়। জনপ্রিয় এই নায়ক নব্বইয়ের দশকের বাংলাদেশে সাড়া জাগানো অনেক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এই অভিনেতা সর্বমোট ২৭টি চলচ্চিত্র অভিনয় করেছিলেন। এছাড়াও টেলিভিশনে তার অভিনীত গুটি কয়েক নাটক প্রচারিত হয়।



১৯৯৩ সালে সালমান শাহ অভিনীত চলচ্চিত্র সমূহঃ


১। কেয়ামত থেকে কেয়ামত, পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান, সহ অভিনেত্রী মৌসুমী
২। অন্তরে অন্তরে পরিচালক, শিবলী সাদিক, সহ অভিনেত্রী-মৌসুমী
১৯৯৪ সালে সালমান শাহ অভিনীত চলচ্চিত্রঃ
৩। দেন মোহর, পরিচালক, শামসুদ্দিন টগর,সহ অভিনেত্রী মৌসুমী
৪। তোমাকে চাই, পরিচালক, মতিন রহমান, সহ অভিনেত্রী-শাবনূর
৫। বিক্ষোভ,পরিচালক, মোহাম্মদ হান্নান, সহ অভিনেত্রী-শাবনূর
৬। বিচার হবে,পরিচালক, শাহ আলম কিরণ, সহ অভিনেত্রী-শাবনূর
৭। চাব থেকে পাওয়া,পরিচালক, রেজা হাসমত, সহ অভিনেত্রী-শাবনূর
১৯৯৫ সালে সালমান শাহ অভিনীত চলচ্চিত্র সমূহঃ
৮। আনন্দ অশ্রু,পরিচালক, শিবলী সাদিক, সহ অভিনেত্রী-শাবনূর
৯। আশা ভালবাসা, পরিচালক, তমিজুদ্দিন রিজভী, সহ অভিনেত্রী-শাবনাজ
১০। জীবন সংসার,পরিচালক, জাকির হোসেন রাজু, সহ অভিনেত্রী-শাবনূর
১১।মহা মিলন,পরিচালক, দিলীপ সোম, সহ অভিনেত্রী-শাবনূর
১২। স্বপ্নের পৃথিবী,পরিচালক, বাদল খন্দকার, সহ অভিনেত্রী-শাবনূর
১৩। স্বপ্নের ঠিকানা,পরিচালক, এম. এ. খালেক, সহ অভিনেত্রী-শাবনূর


১৯৯৬ সালে সালমান শাহ অভিনীত চলচ্চিত্র সমূহঃ


১৪। এই ঘর এই সংসার,পরিচালক, মালেক আফসারী,সহ অভিনেত্রী- বৃষ্টি
১৫। আঞ্জুমান,পরিচালক, হাফিজউদ্দিন,সহ অভিনেত্রী-শাবনাজ
১৬। কন্ন্যাদান,পরিচালক, দেলোয়ার জাহান ঝন্টু,সহ অভিনেত্রী- লীমা
১৭। মায়ের অধিকার,পরিচালক, শিবলী সাদিক,সহ অভিনেত্রী- শাবনাজ
১৮। প্রেম যুদ্ধ,পরিচালক, জীবন রহমান,সহ অভিনেত্রী- লীমা
১৯। স্নেহ,পরিচালক, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সহ অভিনেত্রী-মৌসুমী
২০। সত্যের মৃত্যু নাই,পরিচালক, ছটকু আহমেদ,সহ অভিনেত্রী-শাহনাজ
২১। সুজন সখী,পরিচালক, শাহ আলম কিরণ,সহ অভিনেত্রী-শাবনুর
১৯৯৭ সালে সালমান শাহ অভিনীত চলচ্চিত্র সমূহঃ
২২। তুমি আমার,পরিচালক, জহিরুল হক,সহ অভিনেত্রী-শাবনূর
২৩। প্রিয়জন,পরিচালক, রানা নাসের,সহ অভিনেত্রী-শিল্পী
২৪। স্বপ্নের নায়ক,পরিচালক, নাসির আহমেদ, সহ অভিনেত্রী-শাবনূর
২৫। প্রেম পিয়াসী,পরিচালক, রেজা হাসমত,সহ অভিনেত্রী-শাবনুর
২৬। বুকের ভিতর আগুন,পরিচালক, ছটকু আহমেদ, সহ অভিনেত্রী-শাবনূর

ঘটনার সূত্রপাতঃ 

১৯৯৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ‘প্রেমপিয়াসী’ ছবির ডাবিং করতে যান সালমান শাহ। সেখানে তাঁর সহশিল্পী ছিলেন নায়িকা শাবনূর। কিছুক্ষণ পর সালমান তাঁর বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরীকে ফোন করে বলেন, তাঁর স্ত্রী সামিরাকে নিয়ে এফডিসির সাউন্ড কমপ্লেক্সে আসার জন্য। শ্বশুরের সঙ্গে সাউন্ড কমপ্লেক্সে এসে সামিরা দেখতে পান সালমান ও শাবনূর ঘনিষ্ঠভাবে খুনসুটি করছে। সালমান প্রায়ই এ ধরনের খুনসুটি করতেন। সামিরাকে উত্তেজিত করে তুলতেন। কিছুক্ষণ পর কমর উদ্দিন চলে গেলে সামিরাও দ্রুত গাড়িতে ওঠেন। অবস্থা খারাপ দেখে একই গাড়িতে ওঠেন সালমান শাহ ও চিত্র পরিচালক বাদল খন্দকার।

সালমানের সঙ্গে কথা বন্ধ করে দেন সামিরা। তাঁকে বোঝাতে থাকেন বাদল। বেরিয়ে যাওয়ার সময় সালমান এফডিসির প্রধান ফটকের সামনে নেমে আড্ডা দেন, যা এর আগে কখনো করেননি।রাত ১১টার দিকে নিউ ইস্কাটন রোডের ইস্কাটন প্লাজার বি-১১ নম্বর ফ্ল্যাটে পৌঁছে দিয়ে বিদায় নেন বাদল খন্দকার। সামিরাও তখন ঘরে।

সাড়ে ১১টার দিকে সালমান বেডরুমে গিয়ে টিভি দেখেন। তখনো তাঁদের মধ্যে কথা বন্ধ। ১২টার দিকে সালমানের মোবাইলে একটি ফোন আসে। তিনি বাথরুমে গিয়ে কথা বলে বেরিয়ে টিভি বন্ধ করে অডিও ক্যাসেট ছাড়েন। এ সময় আরো একটি ফোন আসে। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। উত্তেজিত হয়ে সালমান মোবাইল ফোনসেটটি ভেঙে ফেলেন। ক্ষুব্ধ সামিরা ব্যাগ গুছিয়ে ধানমণ্ডি ২৭ নম্বরে ফুফুর বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা হন। সালমানের পিএ আবুল ইন্টারকমে দারোয়ানকে গেট না খুলতে নিষেধ করেন। সামিরা ফিরে এলে সালমান তাঁকে ফুফুর বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

৬ সেপ্টেম্বর সকালে ‘তুমি শুধু তুমি’ ছবির শুটিংয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সালমান ঘুমাতে থাকেন। বাজারে পাঠানো হয় তাঁর দেহরক্ষী দেলোয়ারকে। এ সময় কমর উদ্দিন তাঁর ছেলের ফ্ল্যাটে আসেন। সালমানকে বলেন, মা, ভাই ও তাঁকে নিয়ে সিলেটে যাবেন। এ সময় সিদ্দিক নামের এক প্রযোজকও আসেন। কমর উদ্দিন ও সিদ্দিক চলে যাওয়ার পর সামিরা তাঁর বেডরুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সকাল ১১টার দিকে সালমান ঘুম থেকে উঠে দুই কাজের মেয়ের একজনকে ডেকে চা ও পানি খান। কিছুক্ষণ পর ড্রেসিংরুমে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা লক করে দেন। ঢোকার আগে আবুলকে বলে যান, আমাকে যেন কেউ ডিস্টার্ব না করে। সাড়ে ১১টার দিকে আবুল সামিরাকে জাগিয়ে বলেন, অনেকক্ষণ আগে ড্রেসিংরুমে ঢুকলেও তাঁর কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। সামিরা দরজার ডুপ্লিকেট চাবি খুঁজতে থাকেন।

পৌনে ১২টায় ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে আবুল ও সামিরা ড্রেসিং রুমের দরজা খুলে দেখেন ফ্যানের সঙ্গে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে আছেন সালমান। সামিরা ও দুই কাজের মেয়ে সালমানকে উঁচু করে ধরেন। পাশের বাসার কাজের মেয়ে দড়ি কেটে সালমানকে নামিয়ে আনেন। দড়িটি ছিল ব্যায়ামের যন্ত্র থেকে বের করা। সালমান ফ্যান পর্যন্ত ওঠেন ঘরে থাকা একটি কাঠের মই দিয়ে। নামানোর পর পাশের বাসার কাজের মেয়েটি বলে, ‘শরীর এখনো গরম। উনি মরেননি।’ তখন মাথায় ও গায়ে তেল মালিশ করা হয়। এ সময় মে ফেয়ার বিউটি পার্লার থেকে সামিরার বান্ধবী রুবি এসে শুশ্রূষায় অংশ নেন। হাউজিং কমপ্লেক্সের ম্যানেজারও আসেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চলচ্চিত্রের প্রোডাকশন ম্যানেজার সেলিম এসে সালমান শাহকে মরার মতো পড়ে থাকতে দেখে সালমানের বাবা কমর উদ্দিনকে খবর দেন।

খবর পেয়ে কমর উদ্দিন, সালমানের মা নীলা চৌধুরী, ভাই শাহরান ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। তাঁরা গিয়ে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য লিফট দিয়ে নামাতে যান। এ সময় লিফটের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ১৫ মিনিট দেরি হয়। পরে তাঁকে নামিয়ে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করতে অস্বীকৃতি জানালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। সালমান শাহর বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী রমনা থানায় অপমৃত্যু মামলা করেন। পরবর্তী সময়ে মা নীলা চৌধুরী সালমানের স্ত্রী, শ্বশুর, শাশুড়িসহ কয়েকজনকে আসামি করে আদালতে হত্যা মামলা করেন। এই পর্যায়ে পুরো ব্যাপারটি খুবই নোংরা পর্যায়ে চলে যায়। নীলা চৌধুরী অভিযোগ করেন, সামিরার সাথে বিতর্কিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল এবং এ দু’জন মিলে সালমানকে হত্যা করেছে। সামিয়া পালটা অভিযোগ করেন যে নীলা চৌধুরীই আজিজ ভাই সহ অনেক পুরুষকে তার বাড়িতে নিয়ে আসত এবং এটা নিয়ে সালমান ও তার বাবা নীলার উপর ক্ষুদ্ধ ছিলেন। এছাড়া সামিরা পুরো ঘটনার জন্য সালমান-শাবনুরের প্রেমকেও দায়ী করে।

কোঠি মানুষের ভক্ত

সালমান শাহ অসাধারন অভিনয় দিয়ে বাংলার কোঠি মানুষের ভক্ত হয়েছিলেন। তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র জহিরুল হক ও তমিজউদ্দিন রিজভী পরিচালিত তুমি আমার। জহিরুল হক চলচ্চিত্রের কিছূ অংশ নির্মাণ করার পর মারা যান। পরে বাকি অংশ পরিচালক তমিজউদ্দিন রিজভী বাকি কাজ শেষ করেন। এই চলচ্চিত্রে প্রথমবারের মতো তার বিপরীতে অীভনয় করেন শাবনুর। বাকিটা ইতিহাস। তার পর জুটিঁ একে একে সুজন সখি (১৯৯৪), স্বপ্নের ঠিকানা (১৯৪), বিক্ষোভ (১৯৯৪), মহামিলণ(১৯৯৫), বিচার হবে  (১৯৯৬), স্বপ্নের পৃথিবী (১৯৯৬), তোমাকে চাই (১৯৯৬), চাওয়া থেকে পাওয়া (১৯৯৬). জীবন সংসার(১৯৯৬), আনন্দ অশ্রু(১৯৯৭), স্বপ্নের নায়ক(১৯৯৭), প্রেম পিয়াসী(১৯৯৭), বুকের বিতর আগুন(১৯৯৭), সহ মোট ১৪ টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। সবটি ছিল ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র। সালমান শাহ মৃত্যুর পরে তার অসমাপ্ত কাজের বাকি অংশ মন মানে না ছবির ৫০ শতাংশ চিত্রনায়ক রিয়াজ কে দিয়ে করানো হয়।

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0