ল্যারি পেজ এর জীবনী | Biography of Larry Page

ল্যারি পেজ এর জীবনী | Biography of Larry Page

May 20, 2025 - 13:43
May 28, 2025 - 11:47
 0  1
ল্যারি পেজ এর জীবনী | Biography of  Larry Page

নাম:

লরেন্স এডওয়ার্ড পেজ (Larry Page)

গুগলের শুরুর গল্প:

স্ট্যানফোর্ডে এসে ল্যারি পেজের সাথে পরিচয় হয় কম্পিউটার বিজ্ঞানের আরেক ছাত্র সার্গেই ব্রিনের। তারা তখন একসাথে একটি গবেষণা প্রকল্পে কাজ করা শুরু করেন।

গুগলের উত্থান:

  • Gmail

  • Google Maps

  • Android

  • YouTube (অধিগ্রহণ করে)
    সহ অনেক জনপ্রিয় প্রযুক্তি এবং সেবার সঙ্গে যুক্ত হয়।

নাম: লরেন্স এডওয়ার্ড পেজ (Larry Page)
জন্ম: ২৬ মার্চ ১৯৭৩
জন্মস্থান: ল্যান্সিং, মিশিগান, যুক্তরাষ্ট্র
পরিচিতি: গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, কম্পিউটার বিজ্ঞানী, উদ্যোক্তা

পরিচিতি:

১৮৮৫ সালে বিজ্ঞানী টমাস এডিসনের অধীনস্থ কর্মচারী, নিকোলা টেসলা তাঁকে বলেন, তিনি টমাস এডিসনের মোটর ও জেনারেটরের মান আরো উন্নত করে দিতে পারবেন। টমাস এডিসন তখন বলেন, এটা করে দিতে পারলে টেসলাকে ৫০,০০০ মার্কিন ডলার দেবেন। টেসলা তাঁকে সফলভাবে কাজটি করে দেন। কিন্তু এডিসন তাঁর কথা রাখেননি। তিনি কেবল টেসলার বেতন ১০ ডলার বৃদ্ধি করেছিলেন। টেসলা তখন চাকরি ছেড়ে দেন।

টেসলা তখন নিজের একটি কোম্পানি দেন। কিন্তু সেখানে বিনিয়োগকারীদের সাথে তাঁর মতপার্থক্য দেখা দেয়। একসময় তাঁকে কোম্পানি থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর ১৯০০ সালে টেসলার নতুন আরেকটি কোম্পানির জন্য জেপি মরগান ১,৫০,০০০ ডলার বিনিয়োগ করেন। জেপি মরগান ছিলেন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ব্যাংক ‘জেপি মরগান চেজ’ এর প্রতিষ্ঠাতা। ১৯০১ সালে টেসলার নতুন কোম্পানিও সব ডলার হারিয়ে বসে। টেসলা তারপর অনেকবার জেপি মরগানের কাছে পুনরায় বিনিয়োগের জন্য চিঠি পাঠালেও কোনো সাড়া পাননি।

নিকোলা টেসলা পরবর্তীতে শুধু অবসর ভাতা দিয়ে একাকী জীবন কাটিয়েছেন। ১৯৪৩ সালের ৭ জানুয়ারি হোটেল নিউ ইয়র্কারে নিজের রুমে তিনি মারা যান। পরের বছর টেসলার বন্ধু নিউ ইয়র্ক হেরাল্ড ট্রিবিউনের সাংবাদিক জন জোসেফ ও’নিল টেসলার জীবনী নিয়ে একটি বই লেখেন। ‘প্রোডিগেল জিনিয়াস: দ্য লাইফ অব নিকোলা টেসলা’ নামের সেই বইটি প্রকাশের ৪১ বছর পর ১৯৮৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে, ১২ বছরের এক কিশোর বইটি পড়া শেষ করে কাঁদেন। সেদিনের সেই কিশোরের নাম ল্যারি পেজ, যিনি আজ গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত।

নিকোলা টেসলা খুবই মেধাবী মানুষ ছিলেন। আটটি ভাষায় কথা বলতে পারতেন, তাঁর ফটোগ্রাফিক মেমোরিও ছিল। বর্তমানে সারা বিশ্বে যেভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, তার প্রায় পুরোটাই টেসলার আবিষ্কার ছিল। কিন্তু ব্যবসায় তিনি ছিলেন যাচ্ছেতাই। টেসলার গল্প পড়ে ল্যারি পেজ বুঝতে পেরেছিলেন, শুধু একজন মহান আবিষ্কারক হওয়াই যথেষ্ট নয়। আবিষ্কারকে বাণিজ্যিকীকরণও জানতে হবে। মানুষের কাছে আবিষ্কারকে পৌঁছাতে না পারলে তা বৃথা।

শুধু ভবিষ্যতকে বদলে দেয়া উদ্ভাবনী ধারণাই যথেষ্ট নয়। কারণ, তাতে টমাস এডিসনের মতো লোকেরা শুধু ব্যবহারই করবে আর ছুঁড়ে ফেলে দেবে। এই শিক্ষা যে পরবর্তী জীবনে তিনি ভালোই কাজে লাগিয়েছেন, তার প্রমাণ আজকের গুগল। প্রতিদিন যেকোনো তথ্য জানার জন্য সবাই গুগলে সার্চ করে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৫.৫ বিলিয়ন সার্চ হয় গুগলে। আদর করে একে অনেকে ‘গুগল মামা’ বলেও ডাকে। অক্সফোর্ড ডিকশনারি ‘গুগল’ শব্দকে ক্রিয়াপদের মর্যাদাও দিয়েছে।

গুগল সার্চ ইঞ্জিন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গুগল আমাদের যতটা কাছে থাকে, এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ ততটাই থাকেন পর্দার আড়ালে। তাই তাঁর সম্পর্কে বেশি কিছু জানা যায় না। আজ তাঁকে নিয়েই এই লেখা।       

জন্ম ও শৈশব:

১৯৭৩ সালের ২৬ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে জন্মগ্রহণ করেন লরেন্স এডওয়ার্ড পেজ, যিনি ল্যারি পেজ নামেই পরিচিত। তিনি ছিলেন বাবা কার্ল ভিক্টর পেজ এবং মা গ্লোরিয়া পেজের দ্বিতীয় সন্তান। বাবা ছিলেন মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের অধ্যাপক। একই প্রতিষ্ঠানে মা-ও কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখাতেন। বাবা-মা দুজনই কম্পিউটার বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কযুক্ত হওয়ায় বাড়িতে ব্যক্তিগত কম্পিউটার আর কম্পিউটার বিজ্ঞান সম্পর্কিত বই ও সাময়িকী দিয়ে ভরা ছিল। ফলে শৈশবেই কম্পিউটার সম্পর্কিত জ্ঞান অনেকখানি আয়ত্ত করে ফেলেন ল্যারি পেজ। তাঁর বড় ভাই কার্ল পেজ জুনিয়রও একজন সফল অনলাইন উদ্যোক্তা হন।

ল্যারি পেজের প্রাথমিক বিদ্যাপাঠের শুরুটা হয় মন্টেসরি স্কুল থেকে। সেখানের পরিবেশে তাঁর সৃজনশীলতার যে বিকাশ ঘটে, তা পরবর্তী জীবনে তাঁর কাজে প্রভাবিত করেছে বলে মনে করেন তিনি। এরপর পড়াশোনা করেন ইস্ট ল্যান্সিং হাই স্কুলে। স্নাতক করেন ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানে কম্পিউটার বিজ্ঞানে। এ সময় তিনি সেখানকার ‘সোলার কার টিম’-এ যোগ দেন। উচ্চতর পড়াশোনার জন্য স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যান পিএইচডি করতে। সেখানেই যাত্রা শুরু হয় গুগলের।

গুগলের শুরুর গল্প:

স্ট্যানফোর্ডে এসে ল্যারি পেজের সাথে পরিচয় হয় কম্পিউটার বিজ্ঞানের আরেক ছাত্র সার্গেই ব্রিনের। তারা তখন একসাথে একটি গবেষণা প্রকল্পে কাজ করা শুরু করেন। তারা বিভিন্ন ওয়েবের লিংকগুলো সংগ্রহ করতেন। তারপর একটি অ্যালগরিদমের সাহায্যে ওয়েবসাইটের গুরুত্ব অনুযায়ী র‍্যাংকিং করেন। এই অ্যালগরিদমকে বলা হতো ‘পেজর‍্যাংক’। এভাবে তারা একটি সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করেন, যাতে সার্চ দিলে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক ওয়েবসাইটগুলোর লিংক চলে আসতো। সার্চ ইঞ্জিনটির নাম দেয়া হয় ‘ব্যাকরাব’। তারা এই সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম সংস্করণ নিয়ে আসে ১৯৯৬ সালের আগস্টে স্ট্যানফোর্ডের ওয়েবসাইটে।

ল্যারি পেজ ও সার্গেই ব্রিন ১৯৯৭ সালে সার্চ ইঞ্জিনের নতুন নাম দেন ‘গুগল’। গুগল নামটি নেয়া হয় একটি গাণিতিক শব্দ থেকে, যা দিয়ে বোঝানো হতো ১ এর পর ১০০টি শূন্য। তাদের মতে এটি সার্চ ইঞ্জিনের তথ্য ভান্ডারের বিশালতা নির্দেশ করে। শুরুতে ল্যারি পেজ বা সার্গেই ব্রিন কারোরই গুগলকে নিয়ে ব্যবসা করার ইচ্ছা ছিল না। তারা একাডেমিক দিকেই মনযোগী ছিলেন। তাই গুগলকে চাইলেন বিক্রি করে দিতে। তখন সবচেয়ে বড় সার্চ ইঞ্জিন কোম্পানি ছিল ‘ইয়াহু!’। ১৯৯৭ সালে তারা ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে গুগলকে কেনার জন্য ইয়াহুকে প্রস্তাব দেন। কিন্তু ইয়াহু ফিরিয়ে দেয়। মজার ব্যাপার, ২০০২ সালেও তারা ইয়াহুর কাছে গুগলকে বিক্রি করার চেষ্টা করেন। তখনও তারা ফিরিয়ে দেয়।

প্রথমবার ইয়াহু থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর তারা স্ট্যানফোর্ডের অধ্যাপকদের ও সিলিকন ভ্যালির বিভিন্ন বিনিয়োগকারীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। ১৯৯৮ সালের আগস্টে ‘সান মাইক্রোসিস্টেম’ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা অ্যান্ডি বেখটলশেইম গুগলকে এক লাখ ডলার দেন। গুগলের প্রথম কার্যালয়ে তখন কাজ শুরু হয়। এই কার্যালয়টি ছিল ক্যালিফোর্নিয়ার ম্যানলো পার্কের একটি গ্যারেজে। গ্যারেজটি ছিল পেজ ও ব্রিনের বন্ধু সুসান ওজস্কির বাড়ির। সুসান বর্তমানে ইউটিউবের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্যারেজ থেকে পালো আল্টোর এক সাইকেলের দোকানের উপরের তলায় নতুন কার্যালয় নেয়া হয়। এর সাত মাস পরই মাউন্টেন ভিউয়ে নতুন কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। মাউন্টেন ভিউয়ে গুগলের মূল কার্যালয়কে বর্তমানে ‘গুগল প্লেক্স’ বলে ডাকা হয়।

গুগল কোম্পানি বড় হওয়ার সাথে সাথে এর বড় বিনিয়োগের প্রয়োজন পড়ে। তখন পেজ ও ব্রিন ২৫ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ পান। শুরু থেকে পেজ ছিলেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আর ব্রিন ছিলেন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা শর্ত দেন, তখনকার ২৬ বছর বয়স্ক ল্যারি পেজকে নির্বাহী পদ থেকে সরে যেতে হবে। তাঁর জায়গায় অভিজ্ঞ কাউকে আনা হবে। ল্যারি সেই প্রস্তাব মেনে নিতে বাধ্য হন। তখন সফটওয়্যার কোম্পানি ‘নভেল’ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন এরিক স্মিট। তাঁকে গুগলে আনা হয় ল্যারি পেজের স্থলাভিষিক্ত করার জন্য।

গুগলের সফলতা:

গুগল সার্চ ইঞ্জিনের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকায় ২০০৪ সালে গুগল শেয়ার বাজারে নাম লেখায়। এতে করে ল্যারি পেজ ও সার্গেই ব্রিন- দুজনই বিলিয়নিয়ার হয়ে যান। পেজ সিইও থেকে সরে দাঁড়ালেও ভোটাধিকারের ক্ষমতা ও সর্বোচ্চ অংশের শেয়ার তাদের দুজনেরই ছিল। সিইও পদ থেকে সরে দাঁড়ানোয় পেজ অসন্তুষ্ট ছিলেন। তবে এই সময়টা তিনি অন্যদিকে মন দেন।

ল্যারি পেজ শুরু থেকেই চাইতেন গুগলের কাজ যেন শুধু সার্চ ইঞ্জিনেই সীমাবদ্ধ না থাকে। ভবিষ্যতে প্রভাব ফেলতে পারে এমন জিনিসের প্রতি তাঁর বরাবরই আগ্রহ ছিল। তিনি চাইলেন মানুষের পকেটের মধ্যে কম্পিউটারকে পৌঁছে দিতে। তিনি ২০০৫ সালে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে একটি কোম্পানি কেনেন। এর নাম ছিল ‘অ্যান্ড্রয়েড’। অ্যান্ড্রয়েডের সিইও ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন অ্যান্ডি রুবিন। পেজ তখন রুবিনের সাথে প্রায়ই আলাপে বসতেন। এরিক স্মিট বা সার্গেই ব্রিন কেউই পেজের এই ধারণা নিয়ে আগ্রহী ছিলেন না। গুগলের মতো বড় কোম্পানির কাছে ৫০ মিলিয়ন ডলার তেমন কিছু নয়। তাই এরিক স্মিট এটা নিয়ে আর মাথা ঘামাননি।

পরবর্তী দুই বছরে রুবিন মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম ডেভেলপের কাজ করেন। এ সময় ‘ঝামেলা’ সৃষ্টি করেন স্টিভ জবস। ২০০৭ সালে স্টিভ জবস আইফোন নিয়ে আসলে মোবাইল ফোনের বিপ্লব সৃষ্টি করে। রুবিন তখন মনে করেন। অ্যান্ড্রয়েড নিয়ে আরো কাজ করতে হবে। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে টি মোবাইল সর্বপ্রথম রুবিনের অ্যান্ড্রয়েড চালিত মোবাইল ফোন নিয়ে আসে। উর্ধ্বমুখী যেকোনো মোবাইলের জন্য বিনামূল্যে ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়। ২০০৯ সালে অ্যান্ড্রয়েডচালিত ফোনের বিক্রি ছিল ১.৮%। ২০১০ সালে তা হয় ১৭.২%। ফলে প্রথমবারের মতো অ্যাপলের আইফোন বিক্রিকে (১৪%) ছাড়ানো সম্ভব হয়।

সার্চ ইঞ্জিন ও অ্যান্ড্রয়েডের সফলতায় গুগলের বিজ্ঞাপন বাণিজ্য ক্রমাগত উর্ধ্বমুখী হতে থাকে। ২০১০ সালে গুগল ১৮০ বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি হয় এবং এর কর্মীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪,০০০। সার্চ ইঞ্জিনের সফলতায় এরিক স্মিটের অনেক অবদান থাকলেও অ্যান্ড্রয়েডের ক্ষেত্রে ল্যারি পেজ স্মিটের কাছ থেকে কোনো সহায়তা নেননি। এটাই তাঁকে আত্মবিশ্বাস এনে দেয়।

গুগলের সমস্যা ও তার মোকাবেলা:

গুগল বড় কোম্পানি হওয়ার সাথে সাথে কিছু সমস্যাও দেখা দেয়। আগে যেখানে কোনো প্রকল্পে ১০ জন কাজ করত, এখন সেখানে ২০-৪০ জন কাজ করা শুরু করে। ফলে আমলাতান্ত্রিক কিছু জটিলতা দেখা দেয়। এছাড়া গুগলের জন্য বড় মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়ায় ফেসবুক। গুগলের দক্ষ অনেক কর্মীই ফেসবুকে যোগ দেয়া শুরু করেন। ২০১০ সালে ফেসবুকের ১,৭০০ কর্মীর ১৪২ জনই ছিলেন গুগলের সাবেক কর্মী। ল্যারি পেজ তখন এই সমস্যা মোকাবেলায় গুগলে বৈচিত্র্য আনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।

২০১১ সালে এরিক স্মিট সিইও পদ থেকে সরে দাঁড়ান। ফলে দশ বছর পর নিজের পদ ফিরে পান ল্যারি পেজ। তিনি তখন হার্ডওয়্যার পণ্যের দিকে মন দেন। ২০১২ সালে ১২.৫ বিলিয়ন ডলার দিয়ে ‘মটোরলা’ মোবাইল কোম্পানি কিনে নেন, যদিও পরে একে লেনোভোর কাছে বিক্রি করে দেন। এছাড়া গুগল থেকে ল্যাপটপ ক্রোমবুক, মোবাইল ফোন গুগল পিক্সেল ও গুগল গ্লাস নিয়ে আসেন। ওয়েব ব্রাউজার গুগল ক্রোম ও ফেসবুকের সাথে পাল্লা দেয়ার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘গুগল প্লাস’ আনা হয়। কিন্তু গুগল প্লাস ফেসবুকের মতো জনপ্রিয়তা পায়নি। বর্তমানে ইন্টারনেটের সবচেয়ে বেশি ভিজিট করা সাইট হচ্ছে গুগল। ৪০টি দেশে এর ৭০টি কার্যালয় রয়েছে।

২০১২ সালে কানসাস শহরে গুগল থেকে ফাইবার অপটিক ইন্টারনেট সার্ভিস শুরু হয়। এতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের চেয়ে ১০০ গুণ দ্রুত ইন্টারনেট সেবা বিনামূল্যে দেয়া হয়। ২০১৫ সালে গুগলের ব্যবস্থাপনায় আসে বড় পরিবর্তন। গুগলের জায়গায় নিয়ে আসা হয় ‘অ্যালফাবেট’। অ্যালফাবেটের অধীনে চলে আসে গুগলসহ এর অধীনে থাকা সব কোম্পানি। ল্যারি পেজ তখন অ্যালফাবেটের সিইও পদে চলে আসেন। গুগলের নতুন সিইও হন সুন্দর পিচাই। বর্তমানে অ্যালফাবেটে থেকেই গুগলসহ এর অধীনের অন্যান্য কোম্পানি দেখভাল করছেন ল্যারি পেজ। তিনি বর্তমানে উড়ন্ত গাড়ি নিয়ে কাজ করা কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করছেন।  

গুগলের উত্থান:

গুগল ধীরে ধীরে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিনে পরিণত হয়। এরপর গুগল:

  • Gmail

  • Google Maps

  • Android

  • YouTube (অধিগ্রহণ করে)
    সহ অনেক জনপ্রিয় প্রযুক্তি এবং সেবার সঙ্গে যুক্ত হয়।

পরবর্তী পর্যায়:

২০১৫ সালে গুগল একটি নতুন প্যারেন্ট কোম্পানি Alphabet Inc. গঠন করে, যার প্রথম CEO হন ল্যারি পেজ। তিনি ধীরে ধীরে পরিচালনার দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান এবং উদ্ভাবনী প্রকল্পের দিকে মনোনিবেশ করেন।

ব্যক্তিগত জীবন:

সিলিকন ভ্যালির বড় কোম্পানির সিইওরা যেখানে সুপারস্টারদের মতো চলাফেরা করেন, ল্যারি পেজ সেখানে ব্যতিক্রম। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন সকলের থেকে দূরেই রাখেন। মিডিয়াতেও তাঁকে খুব বেশি দেখা যায় না। ২০০৭ সালে বিয়ে করেন রিসার্চ সায়েন্টিস্ট লুসিন্ডা সাউথওর্থকে। স্ত্রী এবং দুই বাচ্চার সংসার নিয়ে থাকেন পালো আল্টোতে। তিনি ভোকাল কর্ড প্যারালাইসিসে আক্রান্ত। তাই তার কন্ঠস্বর কিছুটা নরম।

তাঁর বাবাও পোলিও রোগে আক্রান্ত ছিলেন। ২০০৬ সালে বাবার নামে চালু করেন ‘দ্য কার্ল ভিক্টর পেজ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন’। এছাড়াও ল্যারি পেজ অনেক দাতব্য কাজের সাথে জড়িত। বর্তমানে তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৫৬ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯ সালে ফোর্বস সাময়িকীর বিশ্বের ধনীদের তালিকায় দশম স্থানে আছেন তিনি।

পুরষ্কার এবং প্রশংসা:

১৯৯৮-২০০৯

  • পিসি ম্যাগাজিন গুগলকে শীর্ষ ১০০টি ওয়েব সাইট এবং সার্চ ইঞ্জিনের মধ্যে স্থান দিয়েছে (১৯৯৮) এবং ১৯৯৯ সালে ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টে উদ্ভাবনের জন্য গুগলকে টেকনিক্যাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেছে। ২০০০ সালে, গুগল প্রযুক্তিগত কৃতিত্বের জন্য ওয়েবি অ্যাওয়ার্ড , পিপলস ভয়েস অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে এবং ২০০১ সালে সার্চ ইঞ্জিন ওয়াচ অ্যাওয়ার্ডে অসাধারণ সার্চ সার্ভিস, সেরা ইমেজ সার্চ ইঞ্জিন, সেরা ডিজাইন, সর্বাধিক ওয়েবমাস্টার বান্ধব সার্চ ইঞ্জিন এবং সেরা সার্চ ফিচার হিসেবে পুরষ্কার পেয়েছে।
  • ২০০২ সালে, পেজকে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের গ্লোবাল লিডার ফর টুমরোহিসেবে মনোনীত করা হয় এবং ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (MIT) এর টেকনোলজি রিভিউ প্রকাশনা কর্তৃক ব্রিনের সাথে, 35 বছরের কম বয়সী বিশ্বের শীর্ষ 100 উদ্ভাবকদের একজন হিসেবে মনোনীত করা হয়, যা তাদের বার্ষিক TR100 তালিকার অংশ হিসেবে (2005 সালের পরে "TR35" তে পরিবর্তিত হয়)।
  • ২০০৩ সালে, পেজ এবং ব্রিন উভয়ই "নতুন ব্যবসা তৈরিতে উদ্যোক্তা মনোভাব এবং গতি বৃদ্ধির জন্য" সম্মানসূচক পদে IE বিজনেস স্কুল থেকে MBA ডিগ্রি অর্জন করেন ।
  • ২০০৪ সালে, তারা মার্কনি ফাউন্ডেশনের পুরষ্কার পেয়েছিলেন এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কনি ফাউন্ডেশনের ফেলো নির্বাচিত হয়েছিলেন । তাদের নির্বাচন ঘোষণা করার সময়, ফাউন্ডেশনের সভাপতি জন জে ইসেলিন "তাদের আবিষ্কার যা আজ তথ্য পুনরুদ্ধারের পদ্ধতিতে মৌলিকভাবে পরিবর্তন এনেছে" তার জন্য দুই ব্যক্তিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
  • ২০০৪ সালে, পেজ এবং ব্রিন আমেরিকান একাডেমি অফ অ্যাচিভমেন্টের গোল্ডেন প্লেট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন ।
  • পেজ এবং ব্রিন ২০০৩ সালে EY উদ্যোক্তা অফ দ্য ইয়ার পুরষ্কারের জন্য পুরষ্কার প্রাপক এবং জাতীয় ফাইনালিস্টও ছিলেন। 
  • ২০০৪ সালেও, X PRIZE পেজকে তাদের বোর্ডের ট্রাস্টি হিসেবে বেছে নেয় এবং তিনি জাতীয় প্রকৌশল একাডেমিতে নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালে, ব্রিন এবং পেজ আমেরিকান একাডেমি অফ আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের ফেলো নির্বাচিত হন । 
  • ২০০৮ সালে পেজ গুগলের পক্ষ থেকে প্রিন্স অফ আস্তুরিয়াস অ্যাওয়ার্ডসে প্রিন্স ফেলিপের কাছ থেকে যোগাযোগ পুরস্কার পেয়েছিলেন।

২০০৯–বর্তমান

  • ২০০৯ সালে, পেজ মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি স্নাতক সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সময় সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। ২০১১ সালে, তিনি ফোর্বসের বিলিয়নেয়ারদের তালিকায় ২৪তম এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১১তম ধনী ব্যক্তি হিসেবে স্থান পান 
  • ২০১৫ সালে, ফোর্বস সাইটে পেজের "পাওয়ারফুল পিপল" প্রোফাইলে বলা হয়েছে যে গুগল "ডিজিটাল যুগের সবচেয়ে প্রভাবশালী কোম্পানি"।
  • জুলাই ২০১৪ সালের হিসাবে, ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার্স ইনডেক্স পেজকে বিশ্বের ১৭তম ধনী ব্যক্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে, যার আনুমানিক মোট সম্পদের পরিমাণ $৩২.৭ বিলিয়ন।
  • ২০১৪ সালের সমাপ্তিতে, ফরচুন ম্যাগাজিন পেজকে "বিশ্বের সবচেয়ে সাহসী সিইও" ঘোষণা করে "বর্ষসেরা ব্যবসায়ী" হিসেবে মনোনীত করে।
  • ২০১৫ সালের অক্টোবরে, গুগলের কর্মীদের ভোটে ফোর্বসের "আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রধান নির্বাহী" তালিকায় পেজকে এক নম্বরে স্থান দেওয়া হয়েছিল। 
  • ২০১৭ সালের আগস্টে, পেজকে ইতালির অ্যাগ্রিজেন্টোর সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করা হয় ।

source:  media ,  wikipedia. 

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0